স্কুলগামী শিশুদের পুষ্টির চাহিদা

কর্তৃক প্রযুক্তি সারাদিন
0 মন্তব্য 431 ভিউজ

শিশুর জন্মের পর থেকেই পরিবারের সবার দায়িত্ব বেড়ে যায়। সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হয় পুষ্টির দিকে। শিশুর বেড়ে ওঠার এ সময়ে খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা বেশি থাকে। শিশুদের বিকাশ ও বৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় হচ্ছে স্কুলে পড়ুয়াদের।

পুষ্টি বিজ্ঞানীরা মনে করেন, যদি খাবার সুষম হয় এবং শরীরের প্রয়োজনের জন্য সঠিক পরিমাণে থাকে তবেই একটি শিশু সঠিকভাবে বেড়ে উঠবে। শিশুর স্কুল সময়টাই ব্রেন ডেভেলপমেন্টের আদর্শ সময়। শিশুদের খাদ্য পরিকল্পনায় নিচের বিষয়গুলো বিবেচনা করা উচিত।

স্কুলগামী শিশুদের পুষ্টির চাহিদা

কার্বোহাইড্রেট থেকে শিশু শক্তি পাবে। যেমন- চাল, আটা, ময়দা, সুজি, আলু, চিনি, গুড়, মধু, চিড়া, মুড়ি ইত্যাদি খাবার।

শরীরের ক্ষয় পূরণ, গঠন এবং দ্রুত বেড়ে ওঠার জন্য প্রোটিন জাতীয় খাবার যেমন- মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, কলিজা, পনির, ডাল, বরবটির বিচি, মটরশুঁটি, মাশরুম ইত্যাদি খেতে হবে। প্রোটিন মাংসপেশি, হরমোন, এনজাইম, রক্তের হিমোগ্লোবিন ইত্যাদি তৈরিতেও সাহায্য করে।

ফ্যাট থেকে শক্তি পাবে যেমন- তেল, ঘি, মাখন ইত্যাদি। এছাড়া ফ্যাট জাতীয় খাবার শিশুর স্নায়ু কোষ তৈরিতে সাহায্য করে।

হাড় ও দাঁতের গঠন এবং রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রচুর খনিজ লবণ এবং ভিটামিনযুক্ত খাবার যেমন- তাজা ও টাটকা মৌসুমি ফলমূল, শাকসবজি, ইত্যাদি রাখতে হবে। চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন- এ, ডি, ই ও কে এগুলো রান্না করলেও খাবারে মান অক্ষুণ্ণ থাকে। ভিটামিন-এ’র অভাবে অনেক শিশুর রাতকানা রোগ হতে পারে। ভিটামিন-ডি’র অভাবে হাড়ের গঠনে সমস্যা হয় এবং রিকেট রোগ হতে পারে। অন্যদিকে পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন-বি ও সি’র অভাবে শিশুর রক্তশূন্যতাসহ নানা ধরনের স্নায়ুবিক রোগ হতে পারে।

খাবার

সকালের নাস্তায় তাদের রুটি সবজি বা হালুয়া ও ডিম, ব্রেড জেলি মার্জারিন বাটার, কর্নফ্ল্যাক্স দুধ, সবজি ডিম দিয়ে নুড্লস, শীতের সময় পিঠা অথবা কিছুই খেতে না চাইলে একটি সিদ্ধ ডিম, এক গ্লাস দুধ ও একটি কলা দিয়ে অভ্যাস করতে হবে।

বাসায় থাকলে ১১টায় যে কোনো মৌসুমি ফল, ফলের জুস, মিল্কশেক, বিস্কিট, বাসায় বানানো ফ্রুটস কেক, যে কোনো পিঠা, কিছু সবজি বাটার বা অলিভ অয়েলে সামান্য ভেজে দিতে পারেন। এছাড়া দেয়া যায় মিক্সড কিছু বাদাম। যা তাদের বেড়ে ওঠার পুষ্টি জোগাবে।

দুপুর খাবারে ভাতের সঙ্গে রঙিন শাক ও সবজি প্রতিদিন দিতে হবে। সঙ্গে মুরগি, ডাল এবং বড় ও ছোট মাছ দিয়ে অভ্যাস করতে হবে। অনেক বাচ্চাই মাছ খেতে চায় না তাকে মাছ খাওয়ার উপকারিতা বোঝাতে হবে। প্রতিদিন খাবারের সঙ্গে একটু লেবু চিপে দিতে হবে যেন ভিটামিন সি পরিপূর্ণভাবে পায়। শসা, গাজর, টমেটো এক/দুই পিস দিতে হবে। এছাড়া যে শিশুদের ওজন কম তাদের ভাতের সঙ্গে একটু ঘি মেখে দেয়া যায়।

বিকালের নাস্তার ক্ষেত্রে বাসায় বানানো রোল, স্যান্ডউইজ, নুড্লস, মোমো, পাটিসাপ্টা পিঠা, সন্দেশ, হালুয়া, মুরগির স্যুপ, যে কোনো ফল, মিক্সড বাদাম ইত্যাদি খাবার থেকে এক/দুইটা আইটেম দেয়া যেতে পারে।

রাতের খাবারও দুপুরের খাবারের মতই হবে। তবে রাতের খাবারটা আগে খাওয়াতে হবে এবং রাতে একগ্লাস দুধ দিতে হবে তাদের। বাচ্চারা যেন পর্যাপ্ত পানি পান করে সেদিকেও খেয়াল রাখা জরুরি।

হাইজিন সম্পর্কে ধারণা দেয়া

এছাড়া সুস্থ থাকতে বিদ্যালয়গামী ছেলেমেয়েদের পুষ্টিকর খাবার ও লেখাপড়া শেখানোর পাশাপাশি পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বা হাইজিন সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে। যেমন- হাতের নখ ছোট ও পরিষ্কার রাখা, খাওয়ার আগে হাত ধোয়া, কাঁচা সবজি ও ফল খাওয়ার আগে ধুয়ে খাওয়া, নিয়মিত দাঁত মাজা, মিষ্টি খাওয়ার পর দাঁত ভালোভাবে পরিষ্কার করা, পরিষ্কার পোশাক পরা, নিয়মিত গোসল করা, পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা, খোলা বাসি খাবার না খাওয়া, খাবার সব সময় ঢেকে রাখা, স্বাস্থ্যসম্মতভাবে টয়লেট ট্রেনিং শেখান এবং কাজ শেষে হাত সাবান দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলা। কারণ এ ব্যাপারগুলোর সঙ্গেও শিশুদের সুস্থতা নির্ভর করে অনেকটা।

আজকালকার অনেক শিশু আছে যাদের বয়স ও উচ্চতার তুলনার ওজন বেশি। এরপরও অনেক মা হয়তো অভিযোগ করছেন, তার বাচ্চাটি না খেয়ে খেয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। নাদুসনুদুস নয়, আমাদের চাওয়া হবে সুস্থ-সবল ও সঠিক হারে বাড়ন্ত শিশু। শিশুর সঠিক বৃদ্ধির জন্য শুধু খাওয়া-দাওয়া দিলেই চলবে না, তাকে দিতে হবে পারিপার্শ্বিক উষ্ণতা, মানসিক বন্ধন। তাই শুধু পুষ্টিকর খাবারই নয় তার সঙ্গে প্রতিদিন নিয়মিত কিছু শারীরিক শ্রমও বাড়াতে হবে যেমন- খেলাধুলা, ব্যায়াম, সাঁতার, সাইক্লিং, কারাতে, বাস্কেটবল, ক্রিকেট, ফুটবল ইত্যাদির খেলার প্র্যাকটিসও করতে হবে।

0 মন্তব্য
0

তুমিও পছন্দ করতে পার

মতামত দিন