ফ্রিল্যান্স ক্যারিয়ার গড়ুন গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে

কর্তৃক মাহমুদুল হাসান
0 মন্তব্য 940 ভিউজ

বর্তমান সময়ে একটি জনপ্রিয় পেশা হচ্ছে গ্রাফিক্স ডিজাইন। যদি কারও মধ্যে সৃজনশীলতা থাকে আর নিজে স্বাধীনভাবে কাজ করার ইচ্ছা থাকে তাহলে খুব সহজেই নিজেকে গ্রাফিক ডিজাইনার হিসেবে গড়ে তুলতে পারবে। বর্তমানে ফ্রিল্যান্স হিসেবে এর তুমুল চাহিদা রয়েছে। দেশের বাইরেও রয়েছে গ্রাফিক্স ডিজাইনে আউটসোর্সিং করার অনেক মাধ্যম।

এর জন্য প্রয়োজন গ্রাফিক্স এর কাজ জানা। আন্তর্জাতিক মানের কাজের বিষয়ে ধারনা থাকতে হবে। এর জন্য গ্র্যাজুয়েট হওয়ার প্রয়োজন নেই তবে ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা থাকা দরকার। ইংরেজিতে দক্ষতা না থাকলে বিদেশি ক্লাইন্টদের সাথে যোগাযোগে সমস্যায় পড়তে হবে। কম্পিউটার সম্পর্কে সাধারণ ধারণা থাকা আবশ্যক। আন্তর্জাতিক কাজের জন্য ইন্টারনেট থাকা বাধ্যতামূলক। গ্রাফিক্স ডিজাইনের কাজের জন্য ছবি এডিটিং সফটওয়্যার (অ্যাডোবি ফটোশপ, অ্যাডোবি ইলাস্ট্রেটর) প্রয়োজন।

গ্রাফিক্স ডিজাইনে কি কি ধরনের কাজ হয়ে থাকেঃ
যে কোন পণ্য বা সার্ভিসের আকর্ষণীয় প্রচারণার জন্য গ্রাফিক্স ডিজাইনের প্রয়োজন হয়ে থাকে। তাই একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনারকে কোন কাজ শুরু করার আগে সেই কাজের সাথে সম্পৃক্ত মানুষের বয়স, আচার-আচরণ, পেশা, চাহিদা ইত্যাদি বিষয়গুলো প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোতে মোটামুটি গ্রাফিক্স ডিজাইনের সবধরনের কাজ পাওয়া যায়, তবে কিছু কাজগুলোর চাহিদা বিশেষভাবে একটু বেশি, তা হলঃ

১। বুক কভার ডিজাইন ২। টি-শার্ট ডিজাইন ৩। ওয়েবসাইট টেম্প্লেট ডিজাইন পিএসডি ৪। ওয়েব ব্যানার ডিজাইন ৫। লোগো ডিজাইন ৬। ভিজিটিং কার্ড ডিজাইন ৭। পোস্ট কার্ড ডিজাইন ৮। ওয়েব বিজ্ঞাপন ডিজাইন ৯। আইকোন ডিজাইন ১০। মোবাইল অ্যাপ বা ইউআই ডিজাইন ১১। ব্রুশিয়ার ডিজাইন।

লোগো ডিজাইন:
লোগো হচ্ছে একটি কোম্পানির পরিচয় বা ব্র্যান্ড। লোগোর মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠানকে চেনা যায় খুব সহজেই। বিশ্বের নামকরা ব্র্যান্ড অ্যাপল, স্যামসাং, গুগল কিংবা ফেইসবুক এবং বাংলাদেশের ব্র্যান্ড আড়ং, গ্রামীণফোন, প্রাণ কিংবা প্রথম আলো শুধুমাত্র তাদের লোগো দেখেই চিনতে পারা যায়। মানসম্মত দৃষ্টিনন্দন লোগো কিন্তু একজন গ্রাফিক ডিজাইনারকেই তৈরি করতে হয়। শুধু প্রতীক নয় লোগোর সাথে কালারিংও ব্র্যান্ডিং এর ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। লোগো যেমন লোকাল বিজনেসে প্রয়োজন হয় তেমনি তা অনলাইনেও বহুল চাহিদা সম্পন্ন একটি বিষয়।

ওয়েব ডিজাইনঃ
বর্তমান সময়ে অনলাইনের যুগে ওয়েবসাইটের চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তা অনেক। বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সামাজিক সংগঠন এমনকি ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটও অনেকে তৈরি করতে চান। আর ব্যবসার প্রসারে ওয়েবসাইট অতি প্রয়োজনীয় একটি হাতিয়ার। ওয়েবসাইট ডিজাইনের জন্য একজন গ্রাফিক ডিজাইনারের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ওয়েবসাইটের সুদৃশ্য বাটন তৈরি, প্রাইসটেবিল তৈরি, ব্যানার তৈরি, ইমেজ এডিটিং, আইকন তৈরি প্রভৃতি কাজ করা ছাড়াও একজন গ্রাফিক ডিজাইনার পিএসডি টেম্পলেটের মাধ্যমে একটি সম্পূর্ণ ওয়েব সাইটের আর্কিটেকচার তৈরি করতে পারেন।

ফ্লায়ার বা ব্রশিউর তৈরিঃ
অনেক কোম্পানিই তাদের সার্ভিসগুলো ক্রেতাদের সামনে দেখানের জন্য ফ্লায়ার বা ব্রশিউর ডিজাইন করে থাকে। এধরনের অনেক গ্রাফিক্সের কাজ এ মার্কেটপ্লেসে পাওয়া যায়। ক্লাইন্ট বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসের মাধ্যমে প্রচুর ফ্লায়ার বা ব্রশিউর ডিজাইন কাজ দিয়ে থাকে।

ভিজিটিং কার্ড তৈরিঃ
সরাসরি মার্কেটিং বা ব্র্যান্ডিং এর জন্য ভিজিটিং কার্ডের গুরুত্ব অপরিসীম। ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান উভয়েরই পরিচিতি বৃদ্ধির জন্য ভিজিটিং কার্ড জনপ্রিয় একটি মাধ্যম। ভিজিটিং কার্ডের পরিসর ছোট হওয়ার কারণে এখানে ডিজাইন করতে হয় সুন্দরভাবে যাতে সংক্ষেপে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ফুটিয়ে তোলা যায়। ভিজিটিং কার্ড গ্রাফিক ডিজাইনের একটি অন্যতম ক্ষেত্র। লোকাল মার্কেটেই শুধু নয়, অনলাইনেও আপনার ডিজাইনকৃত ভিজিটিং কার্ড সেইল করে আয় করতে পারবেন।

বিজ্ঞাপন তৈরিঃ
পন্যের প্রচারণার জন্য বিজ্ঞাপন সবচেয়ে বড় মাধ্যম। তথ্যপূর্ণ, নান্দনিক এবং বিনোদনমূলক বিজ্ঞাপন ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সহজেই। একজন গ্রাফিক ডিজাইনারের সৃজনশীলতা ও দক্ষতার উপর নির্ভর করে একটি বিজ্ঞাপন আবেদন তৈরি করতে পারবে কিনা। বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্যও রয়েছে নানা মাধ্যম। অনলাইন, প্রিন্ট কিংবা ইলেকট্রনিক মিডিয়া যেখানে প্রচারের জন্যই হোক সবরকমের দক্ষতা একজন গ্রাফিক ডিজাইনারের থাকতে হবে।

এসবের মধ্যে শুধুমাত্র একটি ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করে শুরু করতে পারেন ডিজাইনার হিসেবে আপনার ক্যারিয়ার। কয়েকটি বিষয় শিখতে পারলে আপনার কাজ পাওয়ার ক্ষেত্র আরো বর হবে।

কোথায় কাজ পাওয়া যাবেঃ
– পত্রিকা/ম্যাগাজিন/প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান
– বিজ্ঞাপন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান
– প্রিন্টিং এবং ডিজাইনিং প্রতিষ্ঠান
– ওয়েব ডেভেলপিং প্রতিষ্ঠান
– অনলাইন, ফ্রিল্যান্স ওয়েবসাইট

গ্রাফিক্স সম্পর্কিত আউটসোর্সিং কাজের ওয়েবসাইটঃ

কিছু ওয়েবসাইট রয়েছে, যেখানে সবাই ক্লাইন্টের চাহিদা অনুযায়ী ডিজাইন জমা দিয়ে থাকে। কিছু ওয়েবসাইটে প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করে বিজয়ী হয়ে ঐ কাজের জন্য নির্ধারিত অর্থ পেতে পারেন।
www.99designs.com
www.freelancer.com/contest
www.hatchwise.com/
www.logotournament.com/
www.logomyway.com/
www.crowdspring.com/
www.designcrowd.com/
www.designcontest.com/

প্রয়োজন অনুসারে ডিজাইন বিক্রিঃ

কিছু কিছু সাইট আছে, যেখানে আপনার তৈরি বিভিন্ন আইটেম আপলোড করে রাখবেন এবং সেগুলো বিক্রির মাধ্যমে আয় করতে পারবেন। যেমনঃ
www.graphicriver.net
www.dribbble.com/
www.creativemarket.com
www.codegrape.com
www.designcrowd.com
www.freelancer.com/marketplace

কাজে বিড করে অর্থ আয়ঃ 

কিছু ওয়েবসাইট রয়েছে যেখানে কাজ পাওয়া যাবে বিড করে। ক্লাইন্ট এখানে তার কাজের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করবে তা দেখে সেই কাজের জন্য বিড করতে হবে। ক্লাইন্ট ইন্টারভিওয়ের মাধ্যমে কাজ প্রদান করবে। কাজ শেষে অর্থ প্রদান করবে। এরকম কিছু ওয়েবসাইট গুলো হলোঃ

www.upwork.com
www.freelancer.com
www.peopleperhour.com
www.guru.com

0 মন্তব্য
0

তুমিও পছন্দ করতে পার

মতামত দিন