দেশের তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলে ১০ হাজার জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ নিচ্ছে বাংলাদেশ। আর তৃতীয় এই সাবমেরিন ক্যাবলের জন্য ইতোমধ্যে সি-মি-উই ৬ কনসোর্টিয়ামে যুক্ত হওয়ার বিষয়টিও চূড়ান্ত করা হয়েছে। চলতি বছরের ১৫ সেপ্টেম্বরে কনসোর্টিয়ামের সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। এর প্রায় এক বছর আগে এই কনসোর্টিয়ামের উদ্যোক্তাদের চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছিল যে বাংলাদেশ এতে যুক্ত হতে চায়। এখন সমঝোতার মধ্য দিয়ে এটি চূড়ান্ত হলো। কনসোর্টিয়াম এরমধ্যে পাঁচবার বৈঠক করেছে। পরবর্তী বৈঠক হচ্ছে মালদ্বীপে। ২৩ হতে ২৫ অক্টোবরে অনুষ্ঠিতব্য ওই বৈঠকে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ দুটি ডিরেকশনে ১০ টেরাবিট বা ১০ হাজার জিবিপিএস নিচ্ছে। একটি কক্সবাজার হতে সিঙ্গাপুরের দিকে আরেকটি কক্সবাজার হতে ফ্রান্সে দিকে। দুটিতেই ৫ টেরাবিট করে। এই ব্যান্ডউথের জন্য একটি ফাইবার পেয়ারের অর্ধেক নেয়ায় বাংলাদেশের ৭০ মিলিয়ন ডলারের মতো খরচ হতে পারে বলে ধারণা নেয়া হচ্ছে। এটি নানা বিষয়ের উপর নির্ভর করে। সি-মি-উই ৬ কনসোর্টিয়ামে এখন পর্যন্ত ১৫টি দেশ বা অংশীজন যোগ দেয়ার কথা ঠিক হয়েছে। শেষ নাগাদ এখানে হয়তো হয়তো আরও দু’একটি দেশ বা অংশীজন যোগ দিতে পারে। কনসোর্টিয়ামে অংশীজন বেশি হলে খরচ কমবে। ১৫ জনের জন্য ৮ বা ৯ টা ফাইবার পেয়ার লাগবে। সেক্ষেত্রে অংশীজন যদি ২০টা হয় তাহলে এই ফাইবার পেয়ার লাগবে ১২টা। তখন খরচের বিষয়টি ভিন্ন হতে পারে।
এই নভেম্বরে (২০১৯) কনসোর্টিয়ামের টেন্ডার উম্মুক্ত করা হবে। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে টেন্ডার ড্রপিং হবে এরপর ইভ্যাল্যুয়েশন শেষে ওই বছরের মার্চের শেষ নাগাদ চুক্তি করে লাইন তৈরির কার্যক্রমে যাবে কনসোর্টিয়াম। সম্ভাব্য এই তারিখ দু’এক মাস কমবেশিও হতে পারে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার জানান, তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের জন্য সি-মি-উই ৬ এ যোগ দেয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়েছে।বাংলাদেশ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্মতি দিয়েছে এবং টেন্ডার-চুক্তি সব সময় মতো করবে। তিনি বলেন, সি-মি-উই এর অতীতের ৫টি কনসোর্টিয়ামই খুব সাকসেসফুলি রান করা হয়েছে। ক্যাবল লাইন কেবলমাত্র হওয়া না, ক্যাবল লাইন সিগনেফিকেন্টটি-টেকনোলজিক্যালি সাউন্ড হয় সেটাই ফ্যাক্টর। এই সি-মি-উই রুটে এখন যেকোনো কনসোর্টিয়াম সাকসেসফুল হবে। মন্ত্রী জানান, তৃতীয় ক্যাবলের ল্যান্ডিং স্টেশন কক্সবাজারে হচ্ছে। প্রথম সাবমেরিন ক্যাবলের স্টেশনটিই এখানে এক্সটেনশন করে নেয়া হবে। কিছু এডিশনাল বিষয় যোগ হবে। এতে খানিকটা খরচও কমবে বলে তিনি আশা করছেন। ‘যেমন পরিকল্পনা তাতে ২০২৩ সালের মার্চের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে দেশে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের যাত্রা শুরু করা যাবে’ বলছিলেন তিনি। সি-মি-উই (SEA-ME-WE) হচ্ছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য এবং পশ্চিম ইউরোপের সংক্ষিপ্ত নাম। এই এলাকার মধ্য দিয়ে ক্যাবলটি স্থাপিত বলে প্রতিটি ক্যাবলের নামে এমনটা যুক্ত থাকে। যেমন সি-মি-উই ৪, সি-মি-উই ৫।
সর্বশেষ সি-মি-উই ৫ কনসোর্টিয়ামে এই এলাকার দেশগুলোর মধ্যে ছিল বাংলাদেশ, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ভারত, পাকিস্তান, সৌদি আরব, কাতার, ওমান, ইউএই, জিবুতি, মিসর, তুরস্ক, ইতালি, ফ্রান্স, মিয়ানমার, ইয়েমেন। এই ১৯ দেশ ১৯টি ল্যান্ডিং পয়েন্টের মাধ্যমে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। নতুন সি-মি-উই ৬ কনসোর্টিয়ামেও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য এবং পশ্চিম ইউরোপ হতেই দেশগুলো যুক্ত হয়েছে। দেশে এখন ১৪০০ জিবিপিএসের মতো ব্যান্ডউইথ ব্যবহার হচ্ছে বলছে এ সংশ্লিষ্ট দপ্তগুলো। এরমধ্যে দ্বিতয়ি সাবমেরিন ক্যাবলে ৭০০ এর মতো (ক্যাবলটির ক্ষমতা ১৫০০ জিবিপিএস), ইন্টারন্যাশনাল টেরেস্ট্রিয়াল ক্যাবল কোম্পানিগুলো আমদানি করছে ৩০০ এর মতো আর প্রথম সাবমেরিন ক্যাবলে আসছে ৪০০ জিবিপিএস। আইএসপিএবির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক জানান, তাদের মাধ্যমে দেশে প্রায় ৯০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ ব্যবহার হচ্ছে।