রোজা মানে হচ্ছে দিনের নির্দিষ্ট একটা সময় সকল রকম পানাহার থেকে বিরত থাকা। বিভিন্ন ধর্ম-গোত্র ভেদে এর নাম আলাদা আলাদা হয়ে থাকে। মুসলিমরা পানাহার থেকে বিরত থাকলে তাকে বলা হয় ‘সিয়াম’, খ্রিস্টানরা পানাহার থেকে বিরত থাকলে তাকে বলা হয় ‘ফাস্টিং’, হিন্দু বা বৌদ্ধরা পানাহার থেকে বিরত থাকলে তাকে বলা হয় ‘উপবাস’, বিপ্লবীরা পানাহার থেকে বিরত থাকলে তাকে বলা হয় ‘অনশন’, আর চিকিৎসা বিজ্ঞানে পানাহার থেকে বিরত থাকলে তাকে বলা হয় ‘অটোফেজি’।
সব গুলোর একই শুধু ‘অটোফেজি’ ছাড়া বাকি সবগুলোর ব্যাপারে সবার খুব ভালো ধারনা আছে। চলুন আজকে আমরা জেনে নেই চিকিৎসা বিজ্ঞানে ‘অটোফেজি’ বলতে কি বুঝায়।
Autophagy শব্দটি একটি গ্রিক শব্দ। Auto অর্থ নিজে নিজে,এবং Phagy অর্থ খাওয়া। সুতরাং,অটোফেজি মানে নিজেকে নিজে খাওয়া।
সাধারনত শরীরের কোষগুলো বাহির থেকে যখন কোনো খাবার না পায় তখন তারা নিজেরাই নিজের অসুস্থ কোষগুলো খেতে শুরু করে,আর তখন চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এই প্রক্রিয়াকে অটোফেজি বলা হয়।
যদি আরেকটু সহজভাবে বলা হয় তাহলেঃ
আমাদের বাসায় যেমন ময়লা ফেলার ডাস্টবিন থাকে, অথবা আমাদের কম্পিউটারে রিসাইকেল বিন থাকে, তেমনি আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষের মাঝেও একটি করে ডাস্টবিন আছে যেখানে মুলত নিষ্ক্রিয় বা মৃত কোষ গুলো থাকে। সারা বছর শরীরের কোষগুলো বিভিন্ন কাজে খুব ব্যস্ত থাকার কারণে, ডাস্টবিন পরিষ্কার করার সময় পায় না। ফলে কোষগুলোতে অনেক আবর্জনা ও ময়লা জমে যায়। শরীরের কোষগুলো যদি নিয়মিত তাদের এই ডাস্টবিন পরিষ্কার করতে না পারে, তাহলে সুস্থ কোষগুলো একসময় নিষ্ক্রিয় হয়ে শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগের সৃষ্টি করে থাকে। অনেকে জেনে অবাক হবেন যে ক্যান্সার বা ডায়াবেটিসের মত অনেক বড় বড় রোগের শুরু হয় এখান থেকেই।
মানুষ যখন খালি পেটে থাকে,তখন শরীরের কোষগুলো অনেকটা বেকার হয়ে পড়ে। ঠিক তখন প্রতিটি কোষ তার ভিতরের আবর্জনা ও ময়লা গুলো পরিষ্কার করতে শুরু করে। শরীরের কোষগুলোর আমাদের মত আবর্জনা ফেলার জায়গা নেই বলে তারা নিজেরাই নিজের আবর্জনা খেয়ে ফেলে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই পদ্ধতিকে বলা হয় অটোফেজি।
২০১৬ সালে নোবেল কমিটি যখন জাপানের চিকিৎসা বিজ্ঞানী ‘ওশিনরি ওসুমি’-কে অটোফেজি আবিষ্কারের জন্যে পুরষ্কার দেয় তখন থেকে মানুষ বিষয়টির ব্যাপারে সঠিক ধারনা পায়। শুধু এই ত্বত্তটি আবিষ্কার করেই জাপানের চিকিৎসা বিজ্ঞানী ওশিনরি ওসুমি (Yoshinori Ohsumi) নোবেল পুরস্কারটা পেয়ে গেলেন। এরপর থেকে আধুনিক মানুষেরা ব্যাপকভাবে রোজা রাখতে শুরু করে।
এবার একটু ভেবে দেখুন যারা স্বাস্থ্যের কথা ভেবে রোজা রাখেন না, তারা আসলেই কতটুকু স্বাস্থ্য সচেতন।