অনেকেই চায় তার তিল তিল করে জমানো টাকা কোথাও খাটিয়ে করতে। কিন্তু নিরাপত্তার অভাবে কোথায় খাটাবে ভেবে পাচ্ছে না। যারা পর্যাপ্ত নিরাপত্তা চায় তাদের জন্য সবচেয়ে সহজ মাধ্যম হল প্রাইজ বন্ড। ব্যাংকে স্থায়ী আমানত (এফডিআর) বা সঞ্চয়পত্র করা যায় কিন্তু সেক্ষেত্রে টাকার পরিমান বড় বাধা এবং যে কোন সময় ভাঙ্গাতে গেলে মুনাফার হেরফের হয়। অল্প টাকায় সবচেয়ে নিরাপদ হল প্রাইজ বন্ড।কাজেই বাড়তি কিছু আয়ের নাম প্রাইজবন্ডে বিনিয়োগ।
মাত্র ১০০ টাকার প্রাইজবন্ড কিনে যে কেউ পেয়ে যেতে পারেন সর্বোচ্চ ৬ লাখ টাকা পুরস্কার। সমাজের সব শ্রেণির মানুষের মধ্যে সঞ্চয় প্রবণতা বৃদ্ধি করতে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর ‘বাংলাদেশ প্রাইজবন্ড’ নামে প্রাইজবন্ড চালু করে। যেকোনো সময় এই প্রাইজবন্ড ভাঙ্গানো যায় এবং টাকা ফেরত নেওয়া যায়। প্রাইজবন্ড ক্রয়—বিক্রয় দুটিই করা যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সব ক্যাশ অফিস, বাণিজ্যিক ব্যাংক ও সরকারী যে কোন ডাকঘর থেকে।
প্রাইজবন্ডের ইতিহাসঃ
আয়ারল্যান্ডে ১৯৫৬ সালে প্রথম প্রাইজবন্ড চালু হয়। বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালে প্রথম ১০ ও ৫০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজবন্ড চালু হয়। প্রাইজবন্ড বিক্রি করে সরকার সরাসরি জনগণের কাছ থেকে ঋণ নেয়। ভারত ও পাকিস্তানে ১০০ থেকে ৪০ হাজার রুপি মূল্যমানের আট ধরনের প্রাইজবন্ড থাকলেও বাংলাদেশে ১৯৯৫ সালে ১০০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজবন্ড চালু হওয়ার পর ১০ ও ৫০ টাকা মূল্যমানেরগুলো তুলে নেওয়া হয়। গত ২০ বছর ধরে শুধু ১০০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজবন্ডের ড্র অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমানে বছরে চারবার প্রাইজবন্ডের ড্র অনুষ্ঠিত হয়:
৩১ জানুয়ারি,
৩০ এপ্রিল,
৩১ জুলাই ও
৩১ অক্টোবর।
প্রাইজবন্ডের নিয়োম-কানুন
প্রাইজবন্ড কেনার দুই মাস পার হওয়ার পর তা ড্র এর আওতায় আসে। ড্র অনুষ্ঠানের পর দুই বছর পর্যন্ত পুরস্কারের টাকা দাবি করা যাবে। এর মধ্যে কেউ দাবি না করলে পুরস্কারের অর্থ তামাদি হয়ে সরকারি কোষাগারে ফেরত যাবে আর কেউ এই অর্থ দাবি করতে পারবে না। ঢাকার বিভাগীয় কমিশনারকে চেয়ারম্যান করে গঠিত একটি কমিটি প্রাইজবন্ডের ড্র অনুষ্ঠান করে থাকে। প্রতি সিরিজের জন্য মোট ৪৬টি পুরস্কার রয়েছে, যার মোট মূল্যমান ১৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
প্রথম পুরস্কার একটি ৬ লাখ টাকা,
দ্বিতীয় পুরস্কার একটি ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা,
তৃতীয় পুরস্কার দুটি ১ লাখ টাকা করে,
চতুর্থ পুরস্কার দুটি ৫০ হাজার টাকা করে এবং
পঞ্চম পুরস্কার ৪০টি ১০ হাজার টাকা করে।
পুরস্কার বিজয়ী মূল প্রাইজবন্ডসহ নির্ধারিত ফরমে আবেদন করলে সর্বোচ্চ দুই মাসের মধ্যে পে-অর্ডার করা হয়। তবে পুরস্কারের টাকার ওপর ২০ শতাংশ কর দিতে হবে।
এ পর্যন্ত দেশে মোট ৪ কোটি ৪০ লাখ পিস প্রাইজবন্ড রয়েছে। দেশের প্রায় সব পত্রিকায় ড্র এর ফলাফল প্রকাশ করা হয়ে থাকে। এছাড়া অনলাইনে ফলাফল দেখা যায়। অনলাইনে ফলাফল দেখার জন্য এখানে যেতে পারেন।
বিঃ দ্রঃ বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞদের মতে কখনো এক ঝুড়িতে যেমন সব ডিম রাখতে নেই, তেমনই পুরো বিনিয়োগও এক জায়গায় করতে নেই।