নতুন স্মার্টফোন কেনার পর কিছুদিন ভালোই চললেও দিন যত যায় ফোনের গতিও কমতে থাকে। এ সমস্যা অ্যান্ড্রয়েড, উইন্ডোজ বা আইওএস সব অপারেটিং সিস্টেমেই দেখা যায়। একটা সময় এমন অবস্থা হয় যে, পুরনো স্মার্টফোনে ছোটখাটো কোনো কাজ করতেও মাঝে মাঝে অনেক সময় লেগে যায়। এ কারণে যে ঘনঘন ফোন বদলাতে হবে তা কিন্তু নয়। কিছু কোশল অবলম্বন করলেই স্মার্টফোনে পাওয়া যাবে নতুনের মতো গতি। স্মার্টফোনটিকে সব সময় নতুনের মতো গতিময় রাখার কোশল নিয়ে আজকের আয়োজন।
অপারেটিং সিস্টেম আপডেট
অপারেটিং সিস্টেমের নতুন সংস্করণ আসার সঙ্গে সঙ্গেই সবার উচিত ওএস আপডেট করে নেয়া। এতে ফোন থাকবে গতিময়। কেননা ফোনের ওএসে বিভিন্ন সময় নানা রকমের বাগ ধরা পড়ে। তখন ফোনে ত্রুটি দেখা যায়। পুরনো ওএস বাগমুক্ত করতে নতুন সংস্করণ আনা হয়। যদিও ফোন আপডেট করা নিয়ে অনেকের মধ্যে প্রচলিত ভুল ধারণা রয়েছে আর তা হল ফোন আপডেট করলে সেটি হ্যাং বা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যতে পারে মাঝে মাঝে স্লো হয়ে যাওয়ার শঙ্কাও থাকে। প্রতিটি নতুন ভার্সনেই অধিকতর ভালো স্পিডের দিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়।
তাই আপনার ব্যবহৃত ফোনের যদি নতুন কোনো আপডেট এসে থাকে তাহলে অবশ্যই সেটি করে নেয়া উচিত। নিঃসন্দেহে এটি ফোনের স্পিড বৃদ্ধি করবে। অ্যান্ড্রয়েড, আইওএস, উইন্ডোজ ডিভাইসের সেটিংস অপশন থেকে সফটওয়্যার আপডেট অপশন থেকে দেখে নেয়া যাবে কোনো নতুন আপডেট আছে কি না। সেখানে ক্লিক করে ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে ওএসটি আপডেট করে নেয়া যাবে।
ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপ
মোবাইলের ওএসে কিছু অ্যাপ সবসময় নিজ থেকে ব্যবহারকারীর অজান্তেই ব্ল্যাকগ্রাউডে চালু থাকে, যা কিছুক্ষণ পরপরই অটোরিফ্রেশ ও আপডেট হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ফেসবুকের মতো সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যাপগুলো। এ ছাড়া আরও কিছু অ্যাপ রয়েছে যেগুলো ব্যাকগ্রাউন্ডে চালু থেকে প্রতিনিয়ত র্যামের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। এমন ক্ষেত্রে ফোনের সেটিংস থেকে রানিং অ্যাপ্লিকেশন অপশনে গিয়ে অপ্রয়োজনীয় অ্যাপগুলোর ব্যাকগ্রাউন্ডের কাজ বন্ধ করে দিতে হবে। এতে ফোন থাকবে আরও গতিময়।
অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ আনইনস্টল
অনেকের মোবাইল প্রচুর পরিমাণে অ্যাপ ইনস্টল করে রাখেন। এসব অ্যাপ অযথা ইনস্টল করে রেখেছেন অর্থাৎ, অ্যাপ ব্যবহার না করলেও অ্যাপ ইনস্টল করে রাখেন। এমন অনেক অ্যাপ থাকে যেগুলো একবারের পর আর প্রয়োজন পড়ে না। এমন অনেক অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ ইনস্টলের ফলে ফোনের ইন্টার্নাল মেমোরি কমে যায় ও র্যামের ওপর চাপ পড়ে। ফলে স্মার্টফোনটির গতি কমে যায়। তাই ফোনে থাকা অতিরিক্ত ও অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ রিমুভ করে ফেলা উচিত। এতে আপনার ফোন থাকবে নতুনের মতো গতিময়।
লাইট ভার্সন অ্যাপ ব্যবহার
ফেসবুক, টুইটার, মেসেঞ্জার এবং কিছু ব্রাউজার আছে অত্যন্ত জনপ্রিয় এ অ্যাপগুলোর পাশাপাশি বহুসংখ্যক অ্যাপের লাইট ভার্সন বর্তমানে গুগল প্লে স্টোরে পাওয়া যায়। অ্যাপের লাইট ভার্সন সাধারণত ফোনের গতির দিকে লক্ষ্য রেখেই ডিজাইন করা হয় এবং এটি সেসব ব্যবহারকারীর জন্য বিশেষভাবে উপযোগী যারা সবকিছু সাধারণভাবে দেখতে পছন্দ করেন। লাইট ভার্সন অ্যাপ ব্যবহারের ফলে ফোনের স্পিড আগের তুলনায় বৃদ্ধি পাবে, সঙ্গে সঙ্গে আপনার ফোনের ডাটা খরচের পরিমাণও কমে আসবে।
হোম স্ক্রিন ক্লিন
ফোনের হোম স্ক্রিনে প্রচুর ওয়াইগেট রয়েছে। সাধারণত এসব ওয়াইগেট অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। এ ছাড়া নানা কাজে অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা এসব ওয়াইগেট ব্যবহার করেন। অনেকের মোবাইলে প্রচুর পরিমাণে ওয়াইগেট ব্যবহার করতে দেখা যায়। কিন্তু অনেকেই জানেন না যে অতিরিক্ত ওয়াইগেট আপনার ডিভাইসের গতি কমিয়ে দিতে পারে। এ ফিচারের সুবিধার পাশাপাশি অসুবিধাও রয়েছে। অনেক বেশি ওয়াইগেট হোমে থাকলে তা র্যামের ওপর চাপ ফেলে। এতে ফোনের গতি কিছুটা হলেও কমে যায়। তাই সেখানে অপ্রয়োজনীয় ওয়াইগেট কিংবা অ্যাপের আইকন না রাখাই ভালো।
লাইভ ওয়ালপেপার ব্যবহার বন্ধ
স্মার্টফোনে লাইভ ওয়ালপেপার ফোনের সৌন্দর্য বাড়ায় ঠিকই তবে গতি কমিয়ে দেয় অনেকাংশেই। চেষ্টা করুন যথাসম্ভব লাইভ ওয়ালপেপার ইউজ না করতে। কারণ লাইভ ওয়ালপেপার অ্যানিমেশন হওয়ার কারণে ফোনের পাওয়ারের প্রয়োজন হয়। লাইভ ওয়ালপেপারটি বন্ধ করুন। ভালো রকমের সাধারণ কোনো ওয়ালপেপার ব্যবহার করলে ফোনের গতি এবং ব্যাটারি উভয়ই সাশ্রয় হবে।
ইন্টারনাল স্টোরেজ খালি রাখা
অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ আনইনস্টল করার পরও ফোনের ইন্টার্নাল স্টোরেজ খালি রাখলে দারুণ গতি পাওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় ডাউনলোড ফাইল, ব্রাউজারের হিস্ট্রি, অনেকদিন আগের ছবি ইত্যাদি সরিয়ে মেমোরি খালি রাখা উচিত। মেমোরি পরিপূর্ণ হয়ে গেলে ফোন ধীর হয়ে পড়ে। এ জন্য ছবি বা প্রয়োজনীয় ফাইলগুলো কম্পিউটার ব্যাকআপ কিংবা অনলাইনের ক্লাউড স্টোরেজ সংরক্ষিত রাখা যায়। এতে ইন্টার্নাল মেমোরি থেকে অতিরিক্ত ফাইল রিমুভ করার মাধ্যমে কিছু স্টোরেজ বাড়ানো যাবে।
ফ্যাক্টরি ডাটা রিসেট
স্মার্টফোনের গতি একেবারেই কমে গেলে এবং অবস্থা অতিরিক্ত খারাপ হয়ে থাকলে, ফ্যাক্টরি ডাটা রিসেট করে নিতে পারেন। ফ্যাক্টরি ডাটা রিসেট করার আগে অবশ্যই আপনার অ্যান্ড্রয়েডের সব ডাটার ব্যাকআপ নিয়ে রাখবেন। কেননা, ফ্যাক্টরি ডাটা রিসেট করলে ফোনের সব ডাটা মুছে যায়। এরপর আপনার ডিভাইসটি সবকিছু নতুনভাবে সেটআপ করুন। এতে কিছুটা গতি বাড়বে।