২০০৭ সালে বাজারে এসে আইফোন আলোড়ন তুলেছিল বটে, তবে সবাই কিন্তু প্রথম দেখায় প্রেমে পড়ে যায়নি। ভাবেনি ফ্লিপ-ফোনের জায়গা দখলে নেবে। দৃশ্যপটে বছরখানেক পর এল গুগলের অ্যান্ড্রয়েড। তখনো লোকে ব্ল্যাকবেরিকেই ওপরে রেখেছিল।
তবে ২০১০ সালে উচ্চ রেজল্যুশনের ডিসপ্লে, হালকা-পাতলা গড়ন, সেলফি ক্যামেরাসমেত আইফোন ৪ বাজারে এলে সবার টনক নড়ে। মূলত সে সময় থেকেই স্মার্টফোনের বর্তমান ধারাটি পাকাপোক্ত হয়। এরপর পেরিয়ে গেছে পাক্কা এক দশক। এই ১০ বছরে আমাদের জীবনে নানাভাবে প্রভাব রেখেছে স্মার্টফোন। তারই কয়েকটির উল্লেখ করছি এখানে।
সব জায়গায়, সব সময়
ক্যানালিস রিসার্চের তথ্য বলছে, বিশ্বে বর্তমানে কমবেশি ৫০০ কোটি স্মার্টফোন ব্যবহৃত হচ্ছে। আর ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশনস ইউনিয়নের তথ্য বলছে, ২০১০ সালের ১৩০ কোটির তুলনায় বর্তমানে ইন্টারনেট গ্রাহকসংখ্যা ৭২০ কোটির কাছাকাছি পৌঁছেছে (এক ব্যক্তি একাধিক ইন্টারনেট প্যাকেজ ব্যবহার করেন)। বলা বাহুল্য, এঁদের বেশির ভাগই মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন।
প্রযুক্তি খাতকে এগিয়ে নিয়েছে
বর্তমানে বড় পাঁচ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত বাজারমূল্য ৪ লাখ ৭০ হাজার কোটি ডলার। তুলনায় ২০১০ সালের বড় পাঁচ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের বাজারমূল্য ছিল মাত্র ৮০ হাজার কোটি ডলার। সবটাই অবশ্য স্মার্টফোনের অবদান নয়। তবে ২০১৮ সালে বিশ্বব্যাপী মোবাইল ফোনবিষয়ক প্রযুক্তি ও সেবার অবদান ছিল ৪ লাখ কোটি ডলার।
সব কাজের কাজি
গাড়ি ভাড়া থেকে শুরু করে খাবারের ফরমাশ দেওয়া, গেম খেলা, জীবনসঙ্গী খোঁজা, গান শোনা বা বাজার সদাই—সব কাজের জন্যই এখন কোনো না কোনো অ্যাপ আছে। মানে, সব কাজের জন্য এখন আমরা হাতে স্মার্টফোন তুলে নিচ্ছি। ২০১০ সালে এমনটা ছিল না।
গ্রাহকেরা এখন ডিজিটাল মাধ্যমে
গত ১০ বছরে টিভি দেখার হার কমেছে। বদলে ফোনে ঝুঁকছে সবাই। মার্কিন প্রাপ্তবয়স্করা যেমন এখন দিনে গড়ে ৩৪ মিনিট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করছেন। এতে টিভিতে বিজ্ঞাপনের চেয়ে ডিজিটাল মাধ্যমে বিজ্ঞাপনের হার বাড়ছে। অবশ্য ভুয়া সংবাদ ছড়ানোরও অন্যতম হাতিয়ার এই স্মার্টফোন।
মুঠোয় মুঠোয় ক্যামেরা
২০১০ সালে ১২.১ কোটি ডিজিটাল ক্যামেরা বাজারজাত করা হয়। ২০১০ সালে হয়েছে মাত্র ১.৯ কোটি। এক স্মার্টফোনে যদি অত্যাধুনিক চার ক্যামেরার লেন্স জুড়ে দেওয়া হয়, তো ক্যামেরা দিয়ে মানুষ কী করবে? গুগলের প্রতিবেদন বলছে, অ্যান্ড্রয়েড যন্ত্রে প্রতিদিন ৯.৩ কোটি সেলফি তোলা হয়।
মুদ্রার ওপিঠও আছে
আমাদের জীবনে স্মার্টফোনের প্রভাব শুধু যে ভালো, তা কিন্তু নয়। গোপনীয়তার লঙ্ঘন অহরহ হচ্ছে। ব্যক্তিগত তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে। সেলফি তুলতে গিয়ে মৃত্যুহার বেড়েছে। বিচ্ছিন্নতা-বিষণ্নতা বাড়ছে। কাজে অমনোযোগী করে তুলেছে। এমন শত শত উদাহরণ আমাদের সামনেই রয়েছে। তবু গত এক দশকে স্মার্টফোনের বিকল্প কিন্তু মেলেনি। আর দুটো দিন পরই নতুন এক দশক শুরু হচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, নতুন সেই দশকে নতুন কোনো প্রযুক্তি স্মার্টফোনের জায়গা নিতে পারে কি না।
সূত্র: রয়টার্স