যুক্তরাজ্যের লন্ডনে সরকারি ভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জনপ্রিয় ভাষার মর্যাদা পেয়েছে আমাদের প্রাণের ভাষা বাংলা। সম্প্রতি সেখানে বাংলা ভাষাকে এই স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। বর্তমানে লন্ডনে প্রায় ৭২ হাজার বাংলা ভাষাভাষী লোক রয়েছে। জনপ্রিয়তা ও ব্যবহারের দিক থেকে ইংরেজির ঠিক পরেই এর অবস্থান। বাংলা ভাষার পরেই রয়েছে পোলিশ ও তুর্কি ভাষা। বহুল পরিচিত সিটি লিট অ্যাডাল্ট কলেজের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক জরিপে এ কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, লন্ডন হলো বহু সংস্কৃতির শহর। সেখানে বসবাসকারীদের মধ্যে ৩ লাখ ১১ হাজার ২১০ জন ঘরে একটি বিদেশি ভাষা ব্যবহার করেন। আর পুরো লন্ডনে প্রতি দশজনের মধ্যে একজন দ্বিতীয় একটি ভাষায় কথা বলেন।
এরপর জরিপের ফলে বলা হয়, সবচেয়ে বেশি মানুষ কথা বলেন ইংরেজি ভাষায়। এরপরেই সবচেয়ে বেশি যে ভাষায় কথা বলে মানুষ তা হলো বাংলা। এরপরে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে পোলিশ, চতুর্থ টার্কিশ। শুধু লন্ডনে বসবাসকারী ৭১ হাজার ৬০৯ জন কথা বলেন বাংলায়। এই ভাষাটি তিনটি ভিন্ন ভিন্ন বরো’তে সবচেয়ে বেশি মানুষ বলেন। বরোগুলো হলো ক্যামডেন, নিউহ্যাম এবং টাওয়ার হ্যামলেট। এতে বলা হয়, লন্ডনে বাংলা হলো দ্বিতীয় অফিসিয়াল ভাষা। লন্ডনে বসবাসকারী ৭১ হাজার ৬০৯ মানুষ এটাকে তাদের প্রধান ভাষা হিসেবে ব্যবহার করেন।
জরিপের ফল অনুযায়ী বাংলার পরে রয়েছে পোলিশ ভাষা। এ ভাষায় কথা বলেন ৪৮ হাজার ৫৮৫ জন। টার্কিশ ভাষায় কথা বলেন ৪৫ হাজার ১১৭ জন। গুজরাটি ভাষায় কথা বলেন ৪৩ হাজার ৮৬৮ জন। পাঞ্জাবি ভাষায় কথা বলেন ২২ হাজার ১০৮ জন। উর্দুতে কথা বলেন ১৮ হাজার ১২৭ জন। ফ্রেঞ্চ ভাষায় কথা বলেন ১৩ হাজার ১৩ জন। আরবিতে কথা বলেন ১১ হাজার ৫১৩ জন এবং পর্তুগিজ ভাষায় কথা বলেন ৯ হাজার ৮৯৭ জন। জরিপের ফল অনুসারে শতকরা মাত্র ৩ ভাগ বৃটিশ সাবলীলভাবে পোলিশ ভাষায় কথা বলতে পারেন। এর অর্থ বৃটেনের শতকরা ৯৭ ভাগ মানুষ যথাযথভাবে লন্ডনে বসবাসকারী ৪৮ হাজার ৫৮৫ জন মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেন না। ইলিংয়ে বসবাসরত শতকরা প্রায় ৬ ভাগ মানুষ বলেছেন তারা ঘরে পোলিশ ভাষায় কথা বলেন। বার্নেটে এই হার শতকরা ২ ভাগ। ব্রোমলেতে শতকরা ১ ভাগ, লিউয়িশ্যামে শতকরা ২ ভাগ, মারটনারসে শতকরা ৪ ভাগ, আর শতকরা এক ভাগ রিচমন্ডে।
বর্তমানে যুক্তরাজ্যে বাংলাভাষীদের সংখ্যা বাড়লেও ব্রিটিশদের মধ্যে মাত্র তিন শতাংশ মানুষ স্বচ্ছন্দে বাংলা বলতে পারেন বলেও জানিয়েছে ওই সমীক্ষা। লন্ডনের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং বাসিন্দাদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে একটি সমীক্ষা চালিয়েছিল সংস্থাটি। সেই সমীক্ষায় অনেক নতুন তথ্যই উঠে আসে। সেখানেই জানা যায়, লন্ডনের প্রায় ৩ লাখ বাসিন্দা বাড়িতে কোনো না কোনো বিদেশি ভাষায় কথা বলেন। যুক্তরাজ্য অনেকগুলো দ্বীপ নিয়ে গঠিত। দ্বীপগুলোকে একত্রে ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ নামে পরিচিত। এদের মধ্যে সর্ববৃহৎ দ্বীপটির নাম বৃহৎ ব্রিটেন বা গ্রেট ব্রিটেন। যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় মূল ভূখণ্ডের উত্তর-পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত একটি স্বাধীন দ্বীপরাষ্ট্র। রাষ্ট্রটির সরকারি নাম হল গ্রেইট ব্রিটেন এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডের যুক্তরাজ্য। রাষ্ট্রটিতে রিয়েছে চারটি সাংবিধানের সমন্বয়ে গঠিত: ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েল্স্ এবং উত্তর আয়ারল্যান্ড। গ্রেট ব্রিটেনের সবচেয়ে বড় ও জনবহুল ভাগটির নাম ইংল্যান্ড। পশ্চিম অংশে আছে ওয়েলস এবং উত্তরে স্কটল্যান্ড। আয়ারল্যান্ড দ্বীপের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে উত্তর আয়ারল্যান্ড অবস্থিত। যুক্তরাজ্যের বাকী অংশকে আটলান্টিক মহাসাগর, উত্তর সাগর, ইংলিশ চ্যানেল এবং আইরিশ সাগর ঘিরে রেখেছে। গ্রেট ব্রিটেন দ্বীপটি চ্যানেল টানেলের মাধ্যমে ফ্রান্সের সাথে যুক্ত। এছাড়াও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকালীন সময়ে হস্তগত ১৪টি বহিঃস্থ এলাকা এখনও যুক্তরাজ্যের অধীনে রয়েছে।
সূত্র : এশিয়ান ভয়েস