তথ্যপ্রযুক্তির তিন মেগা প্রকল্প নিয়ে যেভাবে এগোচ্ছে সরকার

কর্তৃক প্রযুক্তি সারাদিন
0 মন্তব্য 385 ভিউজ

সরকারের হাতে রয়েছে তথ্যপ্রযুক্তির তিন মেগা প্রকল্প। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২, সাবমেরিন ক্যাবল-৩ ও নিরাপদ ইন্টারনেট। এর মধ্যে প্রথম দুটির পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়েছে। অন্যদিকে নিরাপদ ইন্টারনেট প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। এই সরকারের মেয়াদেই তিনটি মেগা প্রকল্প সম্পন্ন হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২

দেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ ছিল কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট। বাংলাদেশে প্রথম এই স্যাটেলাইট নিয়ে কাজ শুরু হয় ২০০৭ সালে। ২০১৩ সালে রাশিয়ার ইন্টারস্পুটনিকের কাছ থেকে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের বর্তমান কক্ষপথটি কেনা হয়। এটি ছিল কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট। গত বছর ১১ মে এটি উৎক্ষেপন করা হয়।

মহাকাশে দেশের যে দ্বিতীয় স্যাটেলাইট পাঠানো হবে সেটি কমিউনিকেশন নাকি অবজারভেটরি স্যাটেলাইট হবে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে মহাকাশে বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্যাটেলাইট পাঠানো হবে যার নাম হবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২।

এ প্রসঙ্গে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘আমাদের যোগাযোগ স্যাটেলাইট হয়েছে। কিন্তু আমাদের অবজারভেটরি (পর্যবেক্ষণ) বা ওয়েদার (আবহাওয়া) স্যাটেলাইট নেই। এ ধরনের স্যাটেলাইট আমাদের দেশের জন্য খুবই প্রয়োজন। আবহাওয়ার রিপোর্টের জন্য এখন আমরা জাপানের একটি স্যাটেলাইট থেকে তথ্য নিয়ে থাকি। এবার এই নির্ভরশীলতা কমানো হবে।’

মন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের কী ধরনের স্যাটেলাইট প্রয়োজন তার একটি খসড়া তৈরি করা হবে। আগামী দুই এক মাসের মধ্যে এই খসড়া তৈরি হয়ে যাবে। খসড়া চূড়ান্ত হলেই বোঝা যাবে কোন স্যাটেলাইট মহাকাশে উড়বে।’

প্রসঙ্গত, দেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ তৈরি, উৎক্ষেপণ ইত্যাদিতে খরচ হয় প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা।

সাবমেরিন ক্যাবল-৩

সাবমেরিন ক্যাবল-৩ এর বিষয়ে সরকারের হাতে দুটি প্রস্তাব রয়েছে। প্রথমটি হলো সি-মি-উই-৬। এরই মধ্যে সরকার সি-মি-উই-৬ কনসোর্টিয়ামে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে সম্মতিও দিয়েছে। অন্যদিকে, মিয়ানমার-থাইল্যান্ড-সিঙ্গাপুর লাইনের জন্য প্রস্তাব এসেছে সরকারের কাছে। সম্প্রতি মিয়ানমারের সঙ্গে সরকারের সম্পর্কের বিষয়টি উঠে এসেছে এই সংযোগের ক্ষেত্রে। ফলে মিয়ানমার-থাইল্যান্ড-সিঙ্গাপুর লাইনের বিষয়ে ধীরে চলো নীতিতে এগোচ্ছে সরকার।

জানা গেছে, বর্তমানে দেশের যে ব্যান্ডউইথ রয়েছে তা ২০২৩ সালের মধ্যে ফুরিয়ে যাবে। দুটি সাবমেরিন ক্যাবলের ব্যান্ডউইথ দিয়েও কুলিয়ে ওঠা যাবে না। অন্যদিকে, সি-মি-উই-৪ ক্যাবলের আয়ুও ফুরিয়ে যাচ্ছে। কোনও কারণে সি-মি-উই-৪ বিকল হয়ে গেলে বিপদে পড়বে বাংলাদেশ। ফলে বাংলাদেশকে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলে যেতেই হবে। এছাড়া ৬টি আইটিসি (ইন্টারন্যাশনাল টেরেস্ট্রিয়াল ক্যাবল) দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশ ব্যান্ডউইথ আমদানি করছে। ফলে ব্যান্ডউইথের নির্ভরতাও রয়েছে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘আমরা দুটি প্রস্তাবকেই বিবেচনায় রেখেছি। কাউকেই না করিনি। আমরা সবকিছু বিবেচনা করে যৌক্তিক সিদ্ধান্তই গ্রহণ করবো।’

মন্ত্রী জানান, দুটি প্রস্তাবের মধ্যে খরচের পার্থক্য ৫ মিলিয়ন ডলার। সি-মি-উই-৬ -এর জন্য খরচ হবে ৭২ মিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে, মিয়ানমার-থাইল্যান্ড-সিঙ্গাপুর সাবমেরিন ক্যাবল লাইনের জন্য খরচ হবে ৬৬ মিলিয়ন ডলার। দুটির মধ্যে প্রযুক্তি সেবা প্রাপ্তির মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। এ কারণে সবার সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে।

মোস্তাফা জব্বার আরও বলেন, ‘আমরা একটি বিষয় উন্মুক্ত রেখেছি। যদি কোনও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা উদ্যোক্তা তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত হতে আগ্রহ প্রকাশ করে তাহলে আমরা তাদের লাইসেন্স দিয়ে দেবো। বেসরকারিভাবেও দেশে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল আসতে পারে।’

প্রসঙ্গত, প্রথম সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত হতে বাংলাদেশের খরচ হয় প্রায় ৭৫০ কোটি টাকা আর দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত হতে দেশের খরচ হয় ৬১০ কোটি টাকা।

নিরাপদ ইন্টারনেট

দুটি শব্দের একটি প্রকল্প হলেও সরকার এ বিষয়ে বিশাল এক কর্মযজ্ঞ হাতে নিয়েছে। দেশের মানুষের হাতে নিরাপদ ইন্টারনেট পৌঁছে দিতে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন উদ্যোগ। পাশাপাশি শিশুরা যেন ইন্টারনেটে নিরাপদ থাকে সে কারণেও কনটেন্ট ফিল্টারিং, পর্নোসাইট বন্ধের কাজে হাত দিয়েছে সরকার। এ বিষয়ে মোস্তাফা জব্বার জানান, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের ডিওটি বা ডিপার্টমেন্ট অব টেলিকম একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ হবে। তখন ইন্টারনেটকে নিরাপদ রাখতে আরও বেশি সক্ষমতা অর্জন করবে দেশ।

তিনি আরও জানান, এখন কোনও কিছু ব্লক করতে হলে আইআইজিগুলোকে নির্দেশ দিতে হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এসব নির্দেশনা পাঠাতে হবে না। ডিওটি নিজেরাই বন্ধ করতে সক্ষম হবে। যদিও এর কিছু কিছু প্রয়োগ শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।

মন্ত্রী জানান, এখন এই খাতে যে অগ্রগতি তাতে করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস কন্ট্রোলের অবস্থানে যাওয়া গেছে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘আগে ফেসবুকের কোনও বিষয়ে কিছু করতে হলে ফেসবুককে অনুরোধ পাঠাতে হতো। এখন আমরা যেকোনও আইডির স্ট্যাটাস নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো। ক্ষতিকর কোনও স্ট্যাটাস ফেসবুকে আমরা ব্লক করতে পারবো। আগে তো আইডি ব্লক করতে হতো। এটা অনেক বড় একটা অর্জন।’

ইন্টারনেট নিরাপদ রাখতে তার সরকারের গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগের কথা বলতে গিয়ে বলেন, ‘আমরা ২২ হাজার পর্নো সাইট বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছি। অনলাইনে জুয়া খেলার সাইট বন্ধ করতে পেরেছি। টিক টক অসংখ্য ভিডিও সরিয়ে নিয়েছে। টিক টক থেকে লোকজন এসে মাফ চেয়ে গেছে। ভবিষ্যতে কোনও বাজে ভিডিও দেবে না বলে তারা প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছে। জানিয়েছে তারা (টিক টক) বাংলাদেশে অফিস খুলতে আগ্রহী। অফিস চালুর করে তারা তাদের প্রতিশ্রুতি শতভাগ বাস্তবায়ন করতে চায়।’

0 মন্তব্য
0

তুমিও পছন্দ করতে পার

মতামত দিন