চাঁদে যাওয়ার শখ সবাইর মনে মনে আছে। কিন্তু পৃথিবী থেকে মাত্র হাতে গোনা কয়েকজন কাছ থেকে চাঁদকে দেখার সুযোগ পেয়েছে। আর্থিক সক্ষমতা ও নানা বিষয়ে জটিলতার কারনে সম্ভব হয়ে উঠে না। কিন্তু ভেবে দেখুন যদি রকেটে না উঠেই চাঁদে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা নেয়া যায় তাহলে কেমন হবে। ঠিক এমনই অভিজ্ঞতা দেয়ার উপায় বের করেছেন বাংলাদেশের একদল তরুণ। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার এ সময় পর্যন্ত বিভিন্ন গবেষণার তথ্য উপাত্ত ব্যবহার করে ‘লুনার ভিআর’ নামে একটি অ্যাপ তৈরি করেছে বাংলাদেশের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি শিক্ষার্থী দল। যা ‘নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জে’ বাংলাদেশের জন্য প্রথমবারের মত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব এনে দিয়েছে। এর ফলে কেউ চাঁদে না গিয়ে চাঁদে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবে।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসায় বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্বকরেন সাস্ট অলিক নামে একটি দল। বাংলাদেশের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকের সমন্বয়ে মোট পাঁচজন সদস্য রয়েছেন এখানে। এই অ্যাপটির মাধ্যমে মূলত নাসার অ্যাপোলো-১১ অভিযান, মহাকাশ যানটির অবতরণ এলাকা, চাঁদ থেকে সূর্যগ্রহণ দেখা এবং চাঁদকে একটি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি আবর্তন করা যাবে। সাস্ট অলিক নামের দলটি পাঁচজন সদস্য গুলো হলেনঃ ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী কাজী মাইনুল ইসলাম, আবু সাদিক মাহদি এবং সাব্বির হাসান, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী এসএম রাফি আদনান। এবং দলটিকে মেন্টর হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বিশ্বপ্রিয় চক্রবর্তী।
এ বছর মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা, বিশ্বের প্রায় দুই শতাধিক শহরে নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা শহর থেকে এই প্রতিযোগিতার জন্য প্রকল্প পরিকল্পনা জমা দিতে বলা হয়েছিলো। এবং প্রাথমিকভাবে দুই হাজারের বেশি প্রজেক্ট জমা পড়ে। সেখান থেকে প্রতি বিভাগ থেকে একটি করে মোট আটটি প্রকল্প বেছে নেয়া হয় নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার জন্য। চূড়ান্ত প্রতিযোগীরা অনলাইনের মাধ্যমে তাদের প্রজেক্ট মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার কাছে জমা দেয়। পরে আন্তর্জাতিক আসরে ৭৯টি দেশের বাছাইকৃত ২৭২৯টি দলের সঙ্গে লড়াই করে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশের সাস্ট অলিক। নাসার কাছে চাঁদের পরিবেশ সম্পর্কে এ পর্যন্ত যা তথ্য আছে সবগুলোর একটি বাস্তব রূপ এই লুনার ভিআর অ্যাপ্লিকেশনটি।
কি কি থাকছে অ্যাপ্লিকেশনটিতেঃ
মূলত চাঁদে ভ্রমণের বাস্তব অভিজ্ঞতার কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারবে লুনার ভিআর নামের অ্যাপটি। অ্যাপটির মাধ্যমে মানুষ জানতে পারবে চাঁদের পৃষ্ঠটা দেখতে কেমন, সেখানে কী কী আছে, সেখানকার তাপমাত্রা কেমন, মহাকাশ যান অ্যাপোলো-১১ কোথায় অবতরণ করেছিল। সেইসব মানুষের বাস্তব অভিজ্ঞতা সেইসঙ্গে নাসার তথ্য উপাত্ত থেকে চাঁদের ব্যাপারে যে ধারণা পাওয়া গেছে সেগুলো সমন্বিত করে লুনার ভিআর নামের অ্যাপটিতে তা দৃশ্যমান করা হয়েছে। অর্থাৎ নাসার যে গবেষণাগুলো সাধারণ মানুষের আজও অদেখা-অজানা, সে বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা দিতে এই ভার্চুয়াল রিয়েলিটি অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দলটি। যার মাধ্যমে যে কেউ চাঁদে না গিয়েও চাঁদ দেখতে কেমন সেটা ৩৬০ ডিগ্রী ভিউতে পর্যবেক্ষণ করতে পারবে। ঘুরতে পারবেন। হাঁটাহাঁটি করতে পারবেন। এছাড়া চাঁদের পৃষ্ঠ থেকে মহাকাশ দেখতে কেমন লাগবে, সূর্যগ্রহণের অভিজ্ঞতা কেমন হবে সেটার একটি কল্পিত রূপ তুলে ধরা হয়েছে এই অ্যাপ্লিকেশনে। এর ফলে জ্যোতির্বিজ্ঞানের বিষয়ে মানুষের জানার আগ্রহ আরও বাড়বে বলে মনে করেন সাস্ট অলিক দলটির প্রধান অধ্যাপক বিশ্বপ্রিয় চক্রবর্তী।
বিদ্রঃ লুনার ভিআর নামের অ্যাপটি সহজেই অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম মোবাইল ব্যবহারকারীরা গুগল প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করতে পারবেন। এছাড়া আই ফোন ব্যবহারকারীদের জন্য খুব তাড়াতাড়ি অ্যাপটি যুক্ত করার কথা রয়েছে।