২০১২ সাল। বাজারে নতুন একটি ফোন আনে ফিনল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এইচএমডি গ্লোবাল। নকিয়া ৮০৮ পিওরভিউ হ্যান্ডসেটটি আনা হয় সিমবিয়ান অপারেটিং সিস্টেমে। সেসময় স্মার্টফোনটিতে নকিয়া ৪১ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা দিয়েছিল। যা ছিল আলোচিত। এরপর থেকে অ্যান্ড্রয়েড ক্রমেই জনপ্রিয়তা পেতে থাকলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ক্যামেরার মেগাপিক্সেলেও জোর দিতে থাকে। বাড়াতে থাকে তাদের মেগাপিক্সেলের পরিমাণ। এখন এসে সেই মেগাপিক্সেল নিয়ে এক ধরনের যুদ্ধ বা প্রতিযোগিতা শুরু করেছে স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। তারা যেমন মেগাপিক্সেল বাড়াচ্ছে, তেমনি আবার ক্যামেরা সেন্সরে অনেক উন্নয়ন ঘটিয়েছে। গ্রাহকরাও খুব অল্প দামের মধ্যেই অনেকটা ভালো মানের হ্যান্ডসেটও পাচ্ছে।
সম্প্রতি ৬৪ মেগাপিক্সেল ক্যামেরার ফোন উন্মোচন করেছে রিয়েলমি। এটি মূলত চীনের স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অপ্পোর একটি সাবসিডারি প্রকল্প। এর আগে একই পরিমাণ মেগাপিক্সেল দিয়ে ফোন এনেছে শাওমি। তাদের রেডমি নোট ৮ প্রো মডেলে ৬৪ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা দিয়েছে। এমনকি দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠান স্যামসাং ঘোষণা করেছে, তারা পরবর্তীতে আনা ফোনে ১০৮ মেগাপিক্সেল সেন্সর ব্যবহার করবে। বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান কাউন্টার পয়েন্ট বলছে, ২০২১ সালের মধ্যে বাজারে যেসব স্মার্টফোন ছাড়া হবে সেগুলোর ৫০ শতাংশের বেশি হবে তিন বা তার বেশি ক্যামেরা সেন্সরের। বিশ্লেষকদের ভাষ্য, এমন ক্যামেরা ও মেগাপিক্সেল এনে প্রতিষ্ঠানগুলো একে অন্যদের চেয়ে নিজেকে পৃথক করে ফেলছে। তারা গ্রাহকদের আরও কাছে যেতে চাইছে।
তবে সেটা যে খুব একটা সুবিধার হয়ে উঠছে না সেটাও বলছেন বিশ্লেষকরা। তারা মনে করেন, এটা প্রতিষ্ঠানগুলোর একটা বিপণন প্রাঙ্ক বলা যেতে পারে। অবশ্য স্মার্টফোনে কি ফিচার থাকলে ভালো হয় সেটা নিয়ে অবশ্যই কোম্পানিগুলো কাজ করছে। গ্রাহক কি চায় সেটাও দেখছে। ক্যামেরার সেন্সরের ধরণ বদল করার ফলে খুব ছোট হয়ে এসেছে এবং অল্প স্থানে সংকুলান হওয়ায় স্মার্টফোনের খরচও কমেছে। আইডিসি ধারণা করছে, চলতি বছরের মধ্যেই কিছু প্রতিষ্ঠান ৯২ এবং ১০৮ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরার ফোন বাজারে ছাড়বে। ভারতে চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে যে পরিমাণ স্মার্টফোন সরবরাহ করা হয়েছে তার মধ্যে ১৪ শতাংশ ৪৮ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা লেন্সের। আর অন্য ৭০ শতাংশতেই দুই বা তিনটি ক্যামরা রয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আসলে ক্যামেরার মেগাপিক্সেল এখন অনেকটা ট্রেন্ড হিসেবে দাঁড়িয়েছে। ফলে এটার মানকে অনেকেই গুরুত্ব না দিয়ে এর মেগাপিক্সেল বাড়াতেই ব্যস্ত। ফলে অনেকক্ষেত্রে গ্রাহকরা ঠকছেন, প্রতারিত হচ্ছেন।