ক্যাপচা টেস্টঃ রোবটের কাছে কেন আমাদের মনুষ্যত্বের পরীক্ষা দিতে হয়?

কর্তৃক প্রযুক্তি সারাদিন
0 মন্তব্য 572 ভিউজ

ইন্টারনেটে বিভিন্ন একাউন্টে সাইন আপ করতে গিয়ে, ওয়েবসাইটে ঢুকতে গিয়ে বা অনলাইনে টিকেট কাটতে গিয়ে আমরা প্রায়ই একটা পরীক্ষার সম্মুখীন হই- কিছু আঁকাবাঁকা অক্ষর বা সংখ্যা দেখিয়ে তা টাইপ করতে বলা হয়। অনেকসময় ৮-১০টা ছবির মধ্যে কিছু বিশেষ বস্তুর ছবি (যেমন গাড়ি, দোকান, জেব্রা পাসিং ইত্যাদি) চিহ্নিত করতে বলা হয়। এই পরীক্ষায় পাশ করতে সাধারণত খুব বেশি বেগ পেতে হয় না, প্রথমবার ব্যর্থ হলেও দুয়েকবার চেষ্টা করলেই হয়ে যায়। ইন্টারনেট ব্রাউজিং এর মাঝে এমন ব্যাঘাত অনেক সময়ই বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায় অনেকের জন্য।

কিন্তু এই পরীক্ষার মাহাত্ম্য কী? কেন আমাদের এই পরীক্ষা দিতে হয়?

ক্যাপচা নিয়ন আলোয় neonaloy

কয়েকবছর আগেও ক্যাপচা টেস্ট দেখতে অনেকটা এরকম ছিল।

এই পরীক্ষার নাম ক্যাপচা টেস্ট। ক্যাপচা (CAPTCHA) হল Completely Automated Public Turing Test to Tell Computers and Human Apart এর সংক্ষিপ্ত রুপ। একে HIP বা Human Interaction Proof ও বলা হয়। বিভিন্নভাবে এই টেস্ট করা হয়। উপরে উল্লেখিত উদাহরণ ছাড়াও রয়েছে অডিও টেস্ট (এতে কোন শব্দ শুনিয়ে তা টাইপ করতে বলা হয়), ছোটখাটো প্রশ্ন জিজ্ঞাসা ইত্যাদি। এর উদ্দেশ্য কোন কম্পিউটার প্রোগ্রাম বা রোবট যেন সেই ওয়েবসাইটে ঢুকতে না পারে বা একাউন্ট খুলতে না পারে।

এই তথ্যটুকু জানার পর আমার মাথায় প্রথম যে প্রশ্নটুকু এসেছিল তা হল- কম্পিউটার প্রোগ্রাম বা রোবট কেন ইন্টারনেটে ঘাঁটাঘাঁটি করতে যাবে? জিমেইলে একটা একাউন্টে খুললে কম্পিউটার প্রোগ্রামের কি লাভ আর গুগলেরই বা কী ক্ষতি?

ক্যাপচা নিয়ন আলোয় neonaloy

আসলে কিন্তু স্প্যামবটের কার্যকলাপ এতটা “কিউট” না

কি কি ক্ষতি হতে পারে সেটা একটু দেখা যাক-

  • ভাইরাস ছড়াতে পারে
  • অনলাইন পোলে একসাথে অসংখ্য ভোট দিতে পারে
  • বিভিন্ন ক্যারেক্টার কম্বিনেশন ব্যবহার করে পাসওয়ার্ড প্রদানের মাধ্যমে কারও একাউন্ট হ্যাক করতে পারে
  • একসাথে অসংখ্য ইমেইল একাউন্ট খুলতে পারে।
  • ওয়েবসাইট থেকে মানুষের ইমেইল একাউন্ট সংগ্রহ করে পরবর্তীতে স্প্যাম ছড়ানোর জন্য ব্যবহার করতে পারে।
  • অনলাইনে একসাথে অনেক প্রোডাক্ট অর্ডার করার মাধ্যমে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ক্রেতা- উভয়ের জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে।

এখন দেখা যাক এই ক্যাপচা টেস্ট কিভাবে কম্পিউটার প্রোগ্রামকে প্রতিহত করে। ক্যাপচা টেস্টে যে “টাস্ক” গুলো দেয়া হয়, সেগুলো এমনভাবে তৈরী করা হয় যেন মানুষ সহজেই করে ফেলতে পারে, কিন্তু কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা আটকে যাবে। অক্ষরগুলো একটু আঁকাবাঁকা করে দেয়া হয় এবং অডিও টেস্টে একটু অপরিষ্কার শব্দ শোনানো হয়, যেন কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার পক্ষে এগুলো ধরা সম্ভব না হয়। একটা কথা মনে করিয়ে দেই, সায়েন্স ফিকশন সিনেমায় কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার যে উৎকর্ষ দেখানো হয় সে তুলনায় বাস্তব অগ্রগতি বেশ পিছিয়ে আছে, আমাদের চোখে যে সমস্যা অতি সাধারণ, কম্পিউটার প্রোগ্রামগুলো সে সমস্যার সমাধান করতে পারে না। এবং এর ফলে সেই প্রোগ্রাম ওয়েবসাইটে ঢোকা বা একাউন্ট খোলার মত কাজগুলো করতে পারে না।

ক্যাপচা নিয়ন আলোয় neonaloy

ক্যাপচা এর পূর্ণরূপে “ট্যুরিং টেস্ট” কথাটা আছে, এই সম্পর্কে একটু আলোচনা করা যাক।

কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার জনক এলান ট্যুরিং এই “ট্যুরিং টেস্ট” এর জনক। এই পরীক্ষায় একজন মানুষ এবং একটি রোবটের সাথে ভিন্ন কক্ষ থেকে একজন পরীক্ষক কথা বলবেন। পরীক্ষক তাদের দেখবেন না এবং কন্ঠস্বরও শুনবেন না। তিনি তাদের কিছু প্রশ্ন করবেন, মানুষ এবং রোবট লিখিত আকারে সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেবে। এখন এই উত্তরগুলো দেখে যদি পরীক্ষক মানুষ থেকে রোবটকে পৃথক করতে না পারেন অর্থাৎ কোনটা মানুষের দেয়া উত্তর এবং কোনটা রোবটের দেয়া উত্তর সেটা নির্ণয় করতে না পারেন, তবে সেই রোবট ট্যুরিং টেস্টে পাশ! এই হল সহজ কথায় ট্যুরিং টেস্ট।

ক্যাপচা নিয়ন আলোয় neonaloy

খেয়াল করলে দেখব, ক্যাপচা টেস্টেও কিন্তু এই একই কাজ করা হচ্ছে, মানুষ থেকে রোবটকে পৃথক করা হচ্ছে। কেবল এখানে মানুষের বদলে পরীক্ষক হচ্ছে একটি কম্পিউটার, তাই একে Reverse Turing Test বলা হয়।

ইদানিং নতুন এক ধরনের ক্যাপচা টেস্ট আমরা দেখতে পাই। নিচের ছবিটা লক্ষ্য করুন।

I’m not a robot লেখাটির পাশের বক্সের ক্লিক করলেই ক্যাপচা টেস্ট সম্পন্ন হয়ে যায়। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, ক্লিক তো রোবটও করতে পারে। কম্পিউটারের কি ধরার উপায় আছে যে আমি মানুষ না রোবট?

এর উত্তরটা বেশ মজার। আপনি যখন বক্সে ক্লিক করলেন, তখন কম্পিউটার কেবল এটা দেখছে না যে আপনি কোথায় ক্লিক করেছে, সে দেখছে আপনার কম্পিউটারের কার্সরের নড়াচড়া অর্থাৎ মাউসের ব্যবহার (মানুষ এবং রোবটের মাউসের ব্যবহার স্বাভাবিকভাবেই ভিন্ন), আপনার ব্রাউজিং হিস্ট্রি, কুকিজ। সবকিছু দেখে দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে সে যাচাই করে নিচ্ছে যে আপনি আসলেই মানুষ কি না। মূলত, ক্যাপচা টেস্টের জটিলতা দূর করার জন্য এবং দৃষ্টিতে সমস্যা আছে এমন মানুষদের অভিযোগের ভিত্তিতে এই ক্যাপচা টেস্টের উদ্ভাবন করা হয়েছে। এর নাম দেয়া হয়েছে NO CAPTCHA।

তবে, কোনদিন যদি কোন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ক্যাপচা টেস্টে পাশ করতে পারে, তাহলে সম্ভবত এক হিসেবে আমাদের খুশি হওয়া উচিৎ- আমাদের সৃষ্টি প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের নতুন সীমারেখায় পা দিয়েছে!

0 মন্তব্য
0

তুমিও পছন্দ করতে পার

মতামত দিন