বিশ্বের বড় বড় অনেক প্রতিষ্ঠান ফ্রিল্যান্স কর্মীদের দিকে হাত বাড়িয়ে দেবে। কর্মী ও নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মনোভাবের পরিবর্তন শুরু হচ্ছে। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
‘দ্য ২০২০ ট্যালেন্ট টেকনোলজি আউটলুক’ নামের ওই সমীক্ষা পরিচালনা করে কর্মী সমাধানদাতা প্রতিষ্ঠান এসসিআইকেই।
এখন চাকরির জন্য যোগ্য কর্মী খুঁজে বের করা এবং তাঁদের ধরে রাখা প্রতিষ্ঠানের জন্য অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর কর্মী নিয়োগ আরও কঠিন হয়ে গেছে বলে ৭৮ শতাংশ প্রতিষ্ঠান এক সমীক্ষায় তাদের মতামত দিয়েছে।
গত দশকে কর্মশক্তি উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়েছে বলে উল্লেখ করে সাম্প্রতিক ওই গবেষণায় বলা হয়েছে, চাকরি থেকে ঝরে পড়ার হার বেড়ে যাওয়া ও এবং হতাশার হার ২২ শতাংশ ছাড়ানোর ফলে এখন নিয়োগ মানেই চাকরি নয় বরং কর্মীকে আকর্ষণের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সমীক্ষায় বিশ্বের ৪টি মহাদেশের ১০০ জনের বেশি প্রধান নির্বাহী পর্যায়ের কর্মকর্তা, মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তাদের মতামত বিশ্লেষণ করা হয়। তাঁদের নিয়ে করা সমীক্ষা, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে নানা ইনপুট, সাক্ষাৎকার ও প্যানেল আলোচনার মাধ্যমে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন এসসিআইকেইর গবেষকেরা।
গবেষকেরা বলছেন, দীর্ঘ সময় ধরে নিয়োগপ্রক্রিয়ায় চাকরি থেকে ঝরে পড়ার হার বাড়ে এবং হতাশার ফলে কর্মীর চাকরি ছেড়ে দেওয়ার হার বেড়ে গেছে। এতে নতুন কর্মী নিয়োগ দেওয়া যেমন ব্যয়বহুল হয়েছে, তেমনি কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায় প্রভাব ফেলতে পারে, এমন যোগ্য কর্মীকে আকর্ষণ করার বিষয়টিও অনেক কঠিন হয়ে গেছে।
সমীক্ষায় বলা হয়, ৬৮ শতাংশ কর্মী আংশিক বা পুরোপুরিভাবে কাজের সঙ্গে সংযুক্ত না থাকায় কয়েক বিলিয়ন ডলার উৎপাদন পর্যায়ে লোকসান হচ্ছে।
গবেষকেরা বলছেন, ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠানগুলো এ বাস্তবতা বুঝতে পারবে। তাই কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রযুক্তি ও ব্র্যান্ডিংয়ের ওপর বেশি গুরুত্ব দেবে। এতে দ্রুত প্রতিষ্ঠানের জন্য মেধাবী কর্মীকে আকর্ষণ করা যাবে। প্রতিষ্ঠানের সুনাম বাড়াতে ব্র্যান্ডিং ও মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেওয়ার হার বাড়বে আগামী বছর। এতে দক্ষ কর্মীদের কাছে প্রতিষ্ঠানের সঠিক তথ্য তুলে ধরা যাবে। এ ছাড়া মানবসম্পদ মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে আগামী বছর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
গবেষণায় ফ্রিল্যান্সার বা চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের জন্য সুখবর উঠে এসেছে। গবেষকেরা বলছেন, ২০২০ সালে ব্যয়বহুল কর্মীর চেয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো আরও বেশি চুক্তিভিত্তিক বা গিগ কর্মী নিয়োগ দেবে। সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ৫৪ শতাংশ সিইওদের মত হচ্ছে, আগামী দুই বছরে তাঁদের ব্যবসার প্রয়োজনে ক্রাউড রিসোর্স ব্যবহার করবেন। অর্থাৎ, ফ্রিল্যান্সারদের নিয়োগে আগামী দুই বছরে বেশি আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলো।
গবেষণায় দেখা গেছে, পূর্ণকালীন চাকরির অনিশ্চয়তা কর্মীদের আরও বেশি চুক্তিভিত্তিক কাজের দিকে বা গিগ ইকোনমির দিকে ঠেলে দেবে। ২০২০ সালে কর্মী ও চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের মানসিকভাবে পরিবর্তন দেখতে শুরু করবে বিশ্ব।
গিগ ইকোনমির সংজ্ঞায় বলা হচ্ছে, ‘গিগ ইকোনমি’ এমন একটা পরিবেশ, যেখানে অস্থায়ী চাকরির ছড়াছড়ি থাকবে আর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্বল্পমেয়াদি চুক্তিতে স্বতন্ত্র কর্মীদের (ইনডিপেনডেন্ট ওয়ার্কার্স) নিয়োগ দেবে। তারা ফুলটাইম কর্মীদের চেয়ে ফ্রিল্যান্সারদের গুরুত্ব বেশি দেবে এবং বেশির ভাগ কাজ এই ফ্রিল্যান্সারদের দিয়েই করাবে। এই ধারার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার ক্ষমতাকে বা এই রকম ফ্রিল্যান্স দক্ষতাগুলোকে বলা হচ্ছে, ‘গিগ ক্যাপাসিটি’। যেই দেশ বা শহর যত বেশি প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত ও গতিশীল, সেই দেশে বা শহরে এই ‘গিগ ক্যাপাসিটিসম্পন্ন’ লোকবলের দরকার বেশি হবে। মজার ব্যাপার হলো, এই গিগস রাই কিন্তু হবে শহুরে অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি।
অর্থনৈতিক বোদ্ধারা বলছেন, উন্নত বিশ্বে এই ধারা ইতিমধ্যে পরিলক্ষিত হচ্ছে এবং ধারণা করা যাচ্ছে, ২০২০ সালের মধ্যে প্রায় ৪০ ভাগ আমেরিকান চাকরির এই ধারা (ট্রেন্ড) দ্বারা প্রভাবিত হবেন, যা আস্তে আস্তে পুরো বিশ্বে ছড়াবে। বাংলাদেশও ইতিমধ্যে গিগ অর্থনীতিতে শক্তিশালী অবস্থানে চলে এসেছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, শুধু ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে সাড়ে ছয় লাখ ফ্রিল্যান্সার কাজ করছেন।
তথ্যসূত্র: পিটিআই