এমন একটা সময় ছিল যখন উইন্ডোজ নোটপ্যাড ছিল সোর্সকোড লিখার একমাত্র সহজ উপায় কিন্তু ড্রিমওয়েভার, কোডা, টেক্সটমেট এবং আরও অনেক পেশাদার কোড এডিটর আসার পর উইন্ডোজ নোটপ্যাডের কথা প্রায় সবাই ভুলেই গেছে। নোটপ্যাড সহজ উপায় ছিল কিন্তু সহজ হলেই যে সেরা পছন্দ হবে এমনটা নয়, বর্তমানে সেরা হতে হলে সহজ হওয়ার সাথে সাথে পেশাদারীও হতে হয়। বর্তমানে সেরা সোর্সকোড এডিটর হল নোটপ্যাড++(Notepad++), টেক্সটরঙ্গালার(TextWrangler), যেএডিট(jEdit), চ্রিমসন এডিটর(Crimson Editor), সাবলাইম টেক্সট এডিটর (Sublime Text Editor), ভিম (VIM), অ্যাটম (ATOM)
1. নোটপ্যাড++(Notepad++)
নোটপ্যাড++ একটি ওপেন সোর্স অ্যাপ্লিকেশান যা উইন্ডোজ নোটপ্যাডের(যা উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের সাথে আসে) বিকল্প হিসাবে কাজ করে এবং বিভিন্ন ভাষাই ব্যাবহার করা যায়।
আপনি যদি নোটপ্যাড++ ব্যবহার করেন তাহলে উইন্ডোজ নোটপ্যাডের সাথে এর পার্থক্য খুব সহজেই বুজতে পারবেন। এটি মাইক্রোসফট উইন্ডোজ-এর জন্য নির্মিত হলেও এটি লিনাক্স, ইউনিক্স, বিএসডি এবং ম্যাক ওএস এক্সে ব্যবহার করা যায়। নোটপ্যাড++ এ প্লাগইন সাপোর্ট, ট্যাবড এডিটিং, ড্র্যাগ এবং ড্রপ, স্প্লিট স্ক্রিন এডিটিং, সিঙ্ক্রোনাইজ স্ক্রোলিং, বানান পরীক্ষা, অতিরিক্ত ফাইল,দুইটি ফাইল তুলনা, জুমিং এবং আরও অনেক কিছু আছে, যা সোর্সকোড লিখা আর সহজ ও পেশাদার করে দেয়।
সুবিধাঃ
১. লাইটওয়েট এবং দ্রুত শুরু হয়।
২. অনেকগুলো ট্যাবে একসাথে কাজ করা যায়।
৩. প্লাগইন এবং ম্যাক্রোস ব্যবহার করা যায়।
৪. বুকমার্ক যোগ করা যায়।
৫. ড্র্যাগ এবং ড্রপ সাপোর্ট করে।
৬. একাধিক ফাইলে একসাথে খোঁজা এবং কোড প্রতিস্থাপন করা যায়।
৭. সিস্টেম ট্রে – তে মিনিমাইজ করে রাখা যায়।
৮. সিনট্যাক্স এবং ব্রেস হাইলাইটিং করা যায়।
৯. কোড ও টেক্সট ফোলডিং করে রাখা যায়।
১০. কম্পাইলার ইন্টিগ্রেশন করা যায়।
অসুবিধাঃ
১. রিমোটলী ফাইল এডিট করার জন্য কোনও HTTP, SSH বা WebDav সাপোর্ট করেনা।
২. বড় ফাইল সাপোর্ট করেনা।
৩. ম্যাক ওএস এক্স চালানোর জন্য আরেকটি প্রোগ্রাম এর সাহায্য প্রয়োজন হয়।
2. টেক্সটরঙ্গালার(TextWrangler)
টেক্সটরঙ্গালার(TextWrangler) ওপেন সোর্স নয় এবং এটি শুধু ম্যাক ওএস এ ব্যবহার যায়। শুধুমাত্র একটি ভাষায় ব্যবহার করা যায় এবং সেটা ইংরেজি। এতে অ্যাকশনস্ক্রিপ্ট, সি ++, এইচটিএমএল, জাভাস্ক্রিপ্ট, পার্ল, পাইথন, এসকিউএল এবং ভিবিস্ক্রিপ্টের মত 44 প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজগুলির জন্য সিনট্যাক্স এবং ফাংশন ন্যাভিগেশন অন্তর্ভুক্ত করা আছে। টেক্সটরঙ্গালার(TextWrangler) দিয়ে আপনি খুব বড় ফাইলও খুব সহজে খুলতে পারবেন।
সুবিধাঃ
১. প্লাগইন এবং ম্যাক্রোস ব্যবহার করাযায়।
২. বিল্টইন এফটিপি এবং সিকিউর এফটিপি আছে।
৩. রিমোটলী ফাইল এডিট করার জন্য SSH সাপোর্ট করে।
৪. দুটি ফাইল লাইন ধরে ধরে কোম্পেয়ার করা যায়।
৫. সিনট্যাক্স এবং ব্রেস হাইলাইটিং করা যায়।
৬. কোড ও টেক্সট ফোলডিং করে রাখা যায়।
৭. বানান পরীক্ষা করা যায়।
৮. অটো ইন্ডেন্টেশন এবং অটো সমাপ্তি।
৯. একাধিক উদাহরণ আছে।
অসুবিধাঃ
১. একসাথে কাজ করা যায় না।
২. রিমোটলী ফাইল এডিট করার জন্য কোনও HTTP বা WebDav সাপোর্ট করেনা।
৩. টাইগারের পাওয়ার ম্যাকিনটোশ জি৪ সিরিজে কাজ করে না।
3. যেএডিট(jEdit)
JEdit উইন্ডোজ, ম্যাক ওএস এক্স, ওএস / ২, লিনাক্স, বিএসডি, ইউনিক্স এবং ভিএমএস জন্য জাভাতে তৈরি একটি ওপেনসোর্স প্রোগ্রাম। যা শুধুমাত্র পেশাদার প্রোগ্রামারদের জন্য তৈরি করা হয়েছে। এতে শত শত প্লাগইন এবং ম্যাক্রোস সাপোর্ট করে। যেএডিট এর উইন্ডোটি অনুভূমিকভাবে বা উল্লম্বভাবে বিভক্ত করা যায় এবং এতে স্বয়ংক্রিয় ইন্ডেন্ট এবং ১৩০ টিরও বেশি ভাষায় সিনট্যাক্স হাইলাইটের ক্ষমতা আছে। কাজের সুবিধা অনুসারে টুলবার ও স্ট্যাটাসবার সাজিয়ে নেয়া যায়। অ্যাকশনস্ক্রিপ্ট, কোল্ডফিউজেশন, লোটস, রুবি, পাইথন এবং কোবল যেএডিট এ সাপোর্ট করে।
সুবিধাঃ
১. শক্তিশালী সার্চ ইঞ্জিন।
২. কাস্টমাইজেশন অপশনগুলির সাথে সিনট্যাক্স হাইলাইট করা যায়।
৩. অটো ইন্ডেন্টেশন এবং অটো সমাপ্তি।
৪. . কোড ও টেক্সট ফোলডিং করে রাখা যায়।
৫. প্লাগইন দ্বারা কম্পাইলার ইন্টিগ্রেশন যায়।
৬. প্লাগইন এবং ম্যাক্রোস ব্যবহার করা যায়।
৭. অনেকগুলো ট্যাবে একসাথে কাজ করা যায়।
৮. বানান পরীক্ষা করা যায়।
৯. প্লাগইন দ্বারা এফ টি পি সাপোর্ট করে।
১০. প্লাগইন দ্বারা রিমোটলী ফাইল এডিট করার জন্য HTTP বা WebDav সাপোর্ট করে।
অসুবিধাঃ
১. হেভিওয়েট এবং অনেক ধীরে চালু হয়।
২. ম্যাক এ বাগি(Buggy) হতে পারে।
৩. বড় ফাইল সাপোর্ট করে না।
৪. একসাথে কাজ করা যায় না।
৫. রিমোটলী ফাইল এডিট করার জন্য SSH সাপোর্ট করেনা।
4. চ্রিমসন এডিটর(Crimson Editor)
চ্রিমসন এডিটর সি ল্যাঙ্গুয়েজে লেখা ওপেনসোর্স এডিটর, যা শুধুমাত্র উইন্ডোজ জন্য তৈরি হয়েছে। এটি উইন্ডোজ নোটপ্যাডের একটি উপযুক্ত প্রতিস্থাপন এবং এটি ম্যাপেল, লোটাসস্ক্রিপ্ট, সি / সি ++, মাইএসকিউএল, রুবি, পার্ল এবং জেডপিপিএর প্রোগ্রামিং সাপোর্ট করে। বর্তমানে এটি শুধুমাত্র ইংরেজি ভাষা সাপোর্ট করে। দুর্ভাগ্যবশত, চ্রিমসন এডিটর সর্বশেষ সংস্করণ ২০০৮ সালে ছিল এরপর এটি ইমারেল এডিটর দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছে।
সুবিধাঃ
১. সিনট্যাক্স হাইলাইট করা যায়।
২. অটো ইন্ডেন্টেশন করা যায়।
৩. কম্পাইলার ইন্টিগ্রেশন করা যায়।
৪. বুকমার্ক যোগ করা যায়।
৫. এফ টি পি সাপোর্ট করে।
৬. তাৎক্ষণিক / লাইভ বানান পরীক্ষা করা যায়।
৭. ম্যাক্রোস ব্যবহার করা যায়।
অসুবিধাঃ
১. অটো ইন্ডেন্টেশন এবং অটো সমাপ্তি হয়না।
২. কোড ও টেক্সট ফোলডিং করে রাখা যায়না।
৩. প্লাগইন দ্বারা রিমোটলী ফাইল এডিট করার জন্য HTTP, SSH or WebDav সাপোর্ট করেনা।
৪. বড় ফাইল সাপোর্ট করে না।
5. সাবলাইম টেক্সট এডিটর (Sublime Text Editor)
সাবলাইম টেক্সট এডিটর বাজারের একটি সেরা টেক্সট এডিটর।এটা শুধু আইডিই এর বিকল্পই নয়, এটি লাইটওয়েট।এটি সঠিক ও অতন্ত্য দক্ষতার সাথে কাজ করে।এটি তিনটি প্রধান OS- উইন্ডোজ, লিনাক্স এবং ম্যাক OSX- এ কাজ করে।
সুবিধাঃ
১. সাবলাইম টেক্সট খুব সহজে UI এবং UX সাথে ব্যবহার করা যায়।
২. সাবলাইম টেক্সট এর প্রচুর প্লাগইন আছে। এটির খুব সহজে কার্যকারিতার উন্নতি করা যায় এবং কাস্টমাইজেশন করা যায়।
৩. মাল্টি লাইন এডিটিং এবং সিলেকশন করা যায়।
অসুবিধাঃ
১. সাবলাইম টেক্সট ফ্রী নয়। সমমানের টেক্সট এডিটর বাজারে বিনামূল্যে যায়।
২. অতীতের মত আপডেটগুলি আর ঘনঘন আসেনা।
৩. লোডিং সময় নোটপ্যাড++ এর তুলনায় অনেক বেশি।
৪. প্লাগইনগুলির মান সন্দেহজনক।
৬. ভিম (VIM)
ভিম (Vim) এর অর্থ “Vi Improved” । ভিম কম্পিউটারের ইতিহাসে প্রাচীন কোড এডিটরের মধ্যে একটি।
এটি সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে খুব ভাল ভাবে টিকে গেছে। ডেভেলপার এবং কম্পিউটার বিশেষজ্ঞদের মধ্যে ভিম অত্যন্ত জনপ্রিয়, যা সম্পূর্ণরূপে কাস্টমাইজ করা যায়। ভিম দুটি কারণের জন্য বিখ্যাত।
প্রথমত, এটি মাউস ছাড়াই শুধু কীবোর্ড দিয়ে কাজ করা যায়।
দ্বিতীয়ত, এটি প্রায় প্রতিটি ইউনিক্স ভিত্তিক মেশিনে পাওয়া যায়। সুতরাং পোর্টেবিলিটি এবং সর্বব্যাপিতা ভিমের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য।
সুবিধাঃ
১. সম্পূর্ণরূপে কীবোর্ড ভিত্তিক অপারেশন সাপোর্ট করে।
২. রিমোটলী ফাইল এডিট করার জন্য SSH সাপোর্ট করে।
৩. ভিম ওপেন সোর্স এবং ফ্রী।
৪. .vimrc dotfile and VimScript ব্যবহার করে কাস্টমাইজ করা যায়।
৫. ভিম প্রচুর প্লুগিন সাপোর্ট করে।
৬. বড় ফাইল সাপোর্ট করে।
অসুবিধাঃ
১. এটি শিখতে এবং ব্যবহার করতে সময় লাগে।
২. প্লাগইন দিয়ে বেশিরভাগ আধুনিক প্রোগ্রামিং ফিচার ব্যবহার করতে হয়।
৭. অ্যাটম (ATOM)
এটম ২১ শতকের হ্যাকেবল টেক্সট এডিটর হিসাবে পরিচিত। এটি সাবলাইম টেক্সট এর অনুরূপ সুবিধা দেয়। দারুণ কোডিং সেসনের জন্য এর UI এবং UX চমৎকার এবং নিখুঁত। অন্যান্য মূল বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে স্বতঃবৃদ্ধি, ফাইল সিস্টেম ব্রাউজার, একাধিক প্যান এবং আরো অনেক কিছু রয়েছে। আপনি যদি বিনামূল্যে ওপেন সোর্স টেক্সট এডিটর চান, তবে অ্যাটম একটি চমৎকার পছন্দ। কিন্তু যদি আপনি বড় প্রোজেক্ট নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা করেন তবে এটাকে উপেক্ষা করাই ভাল।এটি তিনটি প্রধান OS- উইন্ডোজ, লিনাক্স এবং ম্যাক OSX- এ কাজ করে এবং সম্পূর্ণ পোর্টেবল।
সুবিধাঃ
১. এটম ওপেন সোর্স এবং ফ্রী।
২. অনেক প্যাকেজ আছে এবং কাস্টমাইজেবল। প্যাকেজগুলি লিখতে কফিস্ক্রিপ্ট(CoffeeScript) ব্যবহার করা হয়।
৩. Git নিয়ন্ত্রণ এবং প্যাকেজ ম্যানেজমেন্ট বৈশিষ্ট্য আছে।
৪. এটা শেখা খুব সহজ।
অসুবিধাঃ
১. বড় ফাইল লোড করতে পারে না এবং যদি আপনি 10 মেগাবাইটের উপরের ফাইল লোড করেন তবে ক্র্যাশ করতে পারে।
২. অনেক মেমরি লাগে।
এই সোর্স কোড এডিটর গুলো সাড়া আরও অনেক এডিটর আছে। এখানে কিছু দেয়া হল।
এটিপ্যাড(ATPad), ভিসুয়াল স্টুডিও কোড (Visual Studio Code), আরযে টেক্সটইডি(RJ TextEd), কোমোদো এডিট(Komodo Edit),কম্পোজার(KompoZer), এডিটপ্যাড লাইট(EditPad Lite)