তারহীন বিদ্যুৎ ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি

কর্তৃক মাহমুদুল হাসান
0 মন্তব্য 816 ভিউজ

বর্তমান বিশ্ব প্রযুক্তি নির্ভর। দিনের পর দিন প্রযুক্তির পরিবর্তন ঘটছে। প্রযুক্তি মানুষের জীবন যাত্রাকে সহজ করে তুলছে এবং চেষ্টা চলছে জীবন যাত্রার মানকে আরো কিভাবে সহজ করা যায়। সেই চেষ্টার ফল হিসেবে ডানা মেলা ইন্টারনেট ও রিমোট ছাড়া টিভির ধারণার পর এবার আসছে তারহীন বিদ্যুৎ। কোন রকম তারের সংযোগ ছাড়াই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নেয়া যাবে এই বিদ্যুৎ। তারহীন বিদ্যুৎ এই বিদ্যুৎ ব্যবহার করে দূর-দূরান্তে জ্বলতে পারবে আলো, এমনকি চার্জও দেওয়া যাবে মোবাইলে। মোট কথা বিদ্যুৎ নির্ভর সব কাজই করা যাবে এই তারহীন বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। আর এমন সব অসম্ভবকে সম্ভব করার আশাবাদ তুলে ধরেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) গবেষকদল। তাঁরা এমন এক যন্ত্র (রেকটেনা) উদ্ভাবনের কথা বলছেন, যা সেমিকন্ডাক্টরের সাহায্যে ওয়াই–ফাই তরঙ্গকে শক্তিতে রূপান্তর করবে এবং তা ব্যাটারির বদলে ব্যবহার করা যাবে বিদ্যুৎশক্তির উৎস হিসেবে। গবেষকেরা ইতিমধ্যে রেকটেনা তৈরি নিয়ে কাজ করেছেন। এই রেকটেনার কাজ হলো তড়িৎ–চুম্বকীয় তরঙ্গকে ডিসি বিদ্যুৎ তরঙ্গে রূপান্তর। রেকটেনা সেমিকন্ডাক্টরের সাহায্যে ওয়াই–ফাই তরঙ্গ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে।

রেকটেনা মূলত একধরনের ‘বেতার তরঙ্গ অ্যানটেনা’ যা ব্যবহার করে ওয়াই-ফাইয়ের এসি তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গকে ধরার জন্য। এর সঙ্গে দেওয়া হয় একধরনের দ্বিমাত্রিক নমনীয় ও সুলভ সেমিকন্ডাক্টর, যা বিশ্বের অন্যতম পাতলা সেমিকন্ডাক্টরগুলোর একটি। এসি তরঙ্গ সেমিকন্ডাক্টরের ভেতর দিয়ে যায় এবং ডিসিতে রূপান্তরিত হয়। যা পরবর্তীতে বিদ্যুৎ বর্তনীতে, এমনকি বারবার ব্যবহারযোগ্য ব্যাটারিতেও বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারে। এতে যে রেক্টিফায়ার ব্যবহার করা হয়, তা বিশেষভাবে প্রস্তুত অত্যন্ত পাতলা ও ঘাতসহ মলিবডেনাম ডাইসালফাইড দিয়ে তৈরি। নতুন এই ওয়াই–ফাই তরঙ্গকে রূপান্তরের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি চার্জ করার পদ্ধতি উদ্ভাবন সারা বিশ্বে আনবে নতুন বিপ্লব।

নতুন এই প্রযুক্তির ধারনা মূলত ওয়াই-ফাই থেকে এসেছে। এই রেকটেনার দিয়ে অনেক বড় এলাকাজুড়ে বিদ্যুৎ ছড়িয়ে দেওয়া যাবে খুব সহজেই। এই বিদ্যুৎ দিয়ে ডাক্তারের যন্ত্রপাতিতেও আলোকরশ্মি ফেলে শক্তি ছড়িয়ে দেওয়া যাবে। গবেষণাগারে পরীক্ষা করে দেখা গেছে, এ যন্ত্রটি প্রায় ১৫০ মাইক্রোওয়াটের ওয়াই-ফাই সিগন্যালের থেকে শক্তি নিয়ে প্রায় ৪০ মাইক্রোওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে, যা একটি মোবাইল ফোনের পর্দায় আলো জ্বলানোর জন্য যথেষ্ট। এটা এমন একটা বিশেষ প্রযুক্তি যার ফলে ওয়াই-ফাই, ব্লুটুথ, বা সেলুলার এলটিই সহ আমাদের ব্যবহৃত যাবতীয় সব যন্ত্রপাতি এই বেতারতরঙ্গই এর আয়ত্তের ভেতরে চলে আসবে। গবেষক দলটির অন্যতম সদস্য অধ্যাপক টমাস প্যালাসিওস বলেন, ‘ওয়াই-ফাই তরঙ্গের শক্তিকে সহজেই বড়সড় পরিসরে রূপান্তরের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিগুলোতে বিদ্যুৎ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য এক নতুন পদ্ধতি আমরা নিয়ে এসেছি, যা আমাদের চারপাশের প্রতিটি বস্তুতে বুদ্ধিমত্তা এনে দেবে।’

গবেষকদের মতে, ওয়াই-ফাই হতে পারে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত বিদ্যুতের নতুন উৎস। তাঁদের উদ্ভাবিত যন্ত্রটি (রেকটেনা) দ্বিমাত্রিক। যার ভেতর দিয়ে ওয়াই-ফাই তরঙ্গ অতিক্রম করলে তা পরিবর্তনশীল বিভিন্ন দিকমুখী বিদ্যুৎকে (এসি) একমুখী বিদ্যুতে (ডিসি)-রূপান্তর করবে, ফলে সেই যন্ত্রে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে। এখানে ব্যবহৃত হবে নতুন একধরনের ‘রেকটেনা’(সংকেত গ্রহণকারী একধরনের রিসিভার অ্যানটেনা)। রেকটেনাতে থাকছে আধুনিক সেমিকন্ডাক্টর, যা ওয়াই-ফাই তরঙ্গকে ধরে ফেলবে এবং তাকে ব্যবহারযোগ্য একমুখী বিদ্যুতে রূপান্তরিত করবে। জেসুস গ্রাজাল নামের আরেকজন সহগবেষক, যিনি মাদ্রিদ কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়ে আছেন, জানালেন এটা দিয়ে নাকি ডাক্তারি যন্ত্রপাতিতেও বিদ্যুতায়ন সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ, গবেষকেরা এমন ধরনের ওষুধ উদ্ভাবন করছেন, যা গলাধঃকরণ করলে রোগীর শরীর থেকে বাইরের কম্পিউটারে রোগ নির্ণয়ের দরকারি নানা তথ্য পাঠাতে পারবে।

সর্বশেষ বলতে গেলে তারহীন বিদ্যুৎ আমাদের ভবিষ্যৎ প্রযুক্তিকে সামনের দিকে আরো এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে। এর ফলে পুরো পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হয়ে যাবে।

0 মন্তব্য
0

তুমিও পছন্দ করতে পার

মতামত দিন