স্থবির হয়ে পড়েছে পুরো ভারত। নভেল করোনাভাইরাসের মহামারী ঠেকাতে এরই মধ্যে ভারতজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। মানুষ কার্যত গৃহবন্দি। আগে থেকেই চাপের মুখে থাকা ভারতীয় অর্থনীতি এখন রীতিমতো ধুঁকছে। ভঙ্গুর অর্থনীতির জন্য দুঃসংবাদ শুনিয়েছে স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোও।
প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের কারণে ভারতে কারখানার কার্যক্রম সাময়িক গুটিয়ে নিয়েছে স্যামসাং, অপোর মতো কয়েকটি বৈশ্বিক স্মার্টফোন জায়ান্ট। ফলে ভারতের মাটিতে এসব প্রতিষ্ঠানের কারখানাগুলো এখন বন্ধ রয়েছে। আরো কয়েকটি স্মার্টফোন জায়ান্ট ভারতে স্মার্টফোন উৎপাদন বন্ধের চিন্তাভাবনা করছে। এ পরিস্থিতি দেশটির সামগ্রিক অর্থনীতিকে আরো চাপে ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে। খবর হিন্দুস্তান টাইমস।
ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তর প্রদেশের নয়ডায় বৈশ্বিক স্মার্টফোন জায়ান্টদের নিজস্ব কারখানা রয়েছে। নভেল করোনাভাইরাসের কারণে এরই মধ্যে নয়ডা কারখানার কার্যক্রম সাময়িক গুটিয়ে নিয়েছে দক্ষিণ কোরীয় প্রতিষ্ঠান স্যামসাং। কর্মকর্তাদের বাড়িতে বসে দাপ্তরিক কাজ করতে বলেছে কোম্পানিটি। চীনা প্রতিষ্ঠান অপো ও ভিভো ভারতের মাটিতে তাদের কারখানার কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ রেখেছে। ফলে এসব কারখানায় স্মার্টফোন উৎপাদন হচ্ছে না। শ্রমিক নন এমন কর্মীদের বাড়িতে বসে কাজ করতে বলা হয়েছে। মূলত শ্রমিক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখে লকডাউন শুরুর আগেই কারখানাগুলো বন্ধ করে দিয়েছে স্মার্টফোন জায়ান্টরা।
নভেল করোনাভাইরাসের কারণে গতকাল থেকে ভারতজুড়ে লকডাউন শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে দেশজুড়ে লকডাউনের এ ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে নয়ডার স্মার্টফোন কারখানাগুলো কবে উৎপাদনে যাবে, সেটা নিয়ে সংশয় রয়েছে। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো উত্তর প্রদেশ রাজ্য সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকেও শ্রমিক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে বলা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে ইকোনমিক টাইমস জানিয়েছে, শুরুতে চলতি মাসের শেষ পর্যন্ত কারখানা বন্ধ রাখার কথা ভাবা হয়েছিল। তবে ভারতজুড়ে লকডাউন ঘোষণার পর নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে পরবর্তী করণীয় নিয়ে আলোচনার জন্য এরই মধ্যে অপো ও ভিভোর পক্ষ থেকে উত্তর প্রদেশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তবে আগামী দিনগুলোতে পরিস্থিতি কোন দিকে যায়, সেটা এখনই বলা যাবে না। তাই কারখানাগুলো ফের কবে উৎপাদনে ফিরবে সেটাও অনিশ্চিত।
এ বিষয়ে এক বিবৃতিতে স্যামসাং জানিয়েছে, সংশ্লিষ্টদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে নয়ডায় কারখানা কার্যক্রম গুটিয়ে আনা হয়েছে। কবে নাগাদ কারখানা খুলবে এটা নিয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। স্যামসাং, অপো ও ভিভোর মতো পুনে ও চেন্নাইয়ের স্মার্টফোন কারখানা সাময়িক বন্ধের কথা ভাবছে নকিয়া ও এরিকসন। এ বিষয়ে এরিকসনের মুখপাত্র বলেন, পুনেতে আমাদের স্মার্টফোন কারখানাগুলোতে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে সামাজিক বিচ্ছিন্নকরণ বা সোস্যাল ডিসটেন্সিং মেনে চলা হচ্ছে। শ্রমিকের সংখ্যা ৫০ শতাংশ কমিয়ে দেয়া হয়েছে।
তবে ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্যামসাং, ভিভো ও অপো আগে থেকেই কারখানার কার্যক্রম গুটিয়ে এনেছিল। প্রতিষ্ঠান তিনটি যখন এ উদ্যোগ নেয়, তখন কয়েকটি বড় শহর লকডাইন ছিল। ব্যবসা-বাণিজ্য অনেকটাই স্থবির ছিল। এখন পুরো দেশে লকডাউন শুরু হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য কার্যত বন্ধ রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ঘোষণা না দিলেও কারখানা বন্ধ রাখতে বাধ্য হবে নকিয়া কিংবা এরিকসনের মতো স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান।