প্রতিদিনই বিশ্বের কোথাও না কোথাও মানুষ আত্মহত্যা করছে। কেউ আবার নিজের হাত-পা কাটছে, নিজেকে কষ্ট দিচ্ছে। আবার অনেক মানুষ নিজেকে আঘাত দিয়ে নিজেকে কষ্ট দেওয়ার চিন্তার মধ্যে ঘুরপাক খায়। যারা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি করার কথা চিন্তা করে, তাদের অধিকাংশই জানে না নিজের ক্ষতি করা কী এবং এটি থেকে বের হওয়ার কৌশলই বা কী। কিংস কলেজ লন্ডনের ইমপ্যাক্ট ও এনগেজমেন্ট-বিষয়ক গবেষক ড. স্যালি মার্লো বিবিসি রেডিও ফোর’স হার্টিংয়ে এই প্রশ্নগুলো বিশ্লেষণ করে দেখেছেন যে এর কোনো ধ্রুব উত্তর নেই।
গবেষণা থেকে জানা যায়, নিজের ক্ষতি করতে চাওয়া কোনো ধরনের মানসিক অসুস্থতা নয় এবং সেলফ হার্ম মানেই কেউ তার শরীর কেটে ফেলবে, এমন আচরণও নয়। যুক্তরাজ্যে নিজের ক্ষতি বলতে বোঝায় ‘ইচ্ছা করে বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অথবা কারো কোনো পরোয়ানা না করে নিজেকে বিষ দেওয়া বা আঘাত করা। এই ব্যাখ্যা নিয়ে অনেক কিছু ভাবার আছে। প্রথমত, যে ব্যক্তি নিজের ক্ষতি করছে, সেটি যেন দুর্ঘটনার কারণে না হয়, সেটা যেন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়, অর্থাত্ ইচ্ছা করে নিজের ক্ষতির চেষ্টা হয়।
এমন অনেক কাজ রয়েছে, যা সেলফ হার্ম সংজ্ঞার আওতায় পড়ে। যেমন কেউ বিষ খায়, হয়তো অতিরিক্ত ওষুধ খেয়ে অথবা বিষাক্ত কিছু খেয়ে সেটা করে। কিন্তু সেলফ হার্ম মূলত আরো জটিল এক বিষয়। এটিকে জীবন শেষ করে দেওয়ার প্রেরণা বলেই বিবেচনা করা যেতে পারে। সেই প্রেরণা মেটাতে বা ঠেকাতে অনেক ধরনের কাজ আছে।
কয়েক দশক আগে প্রতি এক জন পুরুষের অনুপাতে তিন জন নারী নিজের ক্ষতি করতে গিয়ে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিত্সা নিতে যেত। আজকাল নিজেদের ক্ষতি করতে চাওয়া পুরুষের অনুপাত প্রায় নারীদের অনুপাতের সমান। গবেষণায় দেখা গেছে, আগের চাইতে এখন আরো বেশি বেশি মানুষ নিজেদের ক্ষতি করছে।
মানুষ নিজেরা নিজের ক্ষতি কেন করে—এই প্রশ্নের একক কোনো উত্তর নেই। তবে কিছু অন্তর্নিহিত ব্যাপার রয়েছে, যা মানুষকে নিজের ক্ষতি করার দিকে ধাবিত করে। যারা নিজের ক্ষতি করে, তাদের মধ্যে এমন কিছু মানুষ আছে, যাদের হতাশা বা উদ্বেগের মতো মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে, তবে বেশির ভাগের কোনো মানসিক সমস্যা নেই। যেসব মানুষকে মানসিক ট্রমার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, তাদের সেলফ হার্মের আশঙ্কা বেশি থাকে।
বিশেষত যারা সমাজে বৈষম্যের শিকার হন, যেমন সমকামী সম্প্রদায়ের মানুষ অথবা সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্নতায় ভোগা মানুষ সেলফ হার্মের ঝুঁকিতে সবচেয়ে বেশি থাকে। কিছু গবেষক মনে করেন বঞ্চনা, দারিদ্র্য ও কঠোরতা মানুষের মধ্যে নিজের ক্ষতি করার আশঙ্কা তৈরি করে। সাম্প্রতিক বছরে অর্থনৈতিক মন্দা সেলফ হার্ম বাড়ার অন্যতম কারণ। আবার এমন তত্ত্বও রয়েছে যে সোশ্যাল মিডিয়া সেলফ হার্ম বাড়াতে ভূমিকা রাখে।