একগুচ্ছ মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানি চীনে নিষিদ্ধ হতে পারে

কর্তৃক প্রযুক্তি সারাদিন
0 মন্তব্য 333 ভিউজ

বেইজিং আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিল হুয়াওয়েকে পরিকল্পিতভাবে খুন হতে দেখলে তারা বসে থাকবে না। এবার প্রতিষ্ঠানটিকে ঘিরে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন সিদ্ধান্ত বিষয়ে কঠোর হতে যাচ্ছে। পাল্টা জবাব দেয়ার অংশ হিসেবে বেইজিং মার্কিন একগুচ্ছ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানকে ‘অবিশ্বস্ত’ তালিকাভুক্ত করার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। বাস্তবে এমন হলে তা যুক্তরাষ্ট্র-চীনের চলমান বাণিজ্য বিরোধে নতুন মাত্রা যোগ করবে। খবর গ্লোবাল টাইমস।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, চীন প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপল ইনকরপোরেশনসহ সিসকো সিস্টেমস ও কোয়ালকম ইনকরপোরেশনের মতো অন্য মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোকে অবিশ্বস্ত তালিকাভুক্ত করার মাধ্যমে নিষিদ্ধ করার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। শুধু অবিশ্বস্ত তালিকাভুক্ত করা নয়; এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করবে দেশটি। পাশাপাশি বোয়িং কোম্পানির কাছ থেকে উড়োজাহাজ ক্রয় স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বৈশ্বিক চিপ নির্মাতারা যাতে চীনভিত্তিক হুয়াওয়ের কাছে চিপ বা সেমিকন্ডাক্টর সরবরাহ করতে না পারে সে বিষয়ে নতুন করে ব্যবস্থা নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। গত দুই দিন আগে ট্রাম্প প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তের পাল্টা জবাব দিতে চীনে একগুচ্ছ মার্কিন প্রতিষ্ঠানকে নিষিদ্ধ করার হুমকি এল।

সম্প্রতি মার্কিন বাণিজ্য বিভাগ জানিয়েছে, হুয়াওয়ের কৌশলগত সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানি অধিগ্রহণ ঠেকাতে তারা নতুন একটি বাণিজ্য নীতিমালা অনুমোদন দিচ্ছে। বৈশ্বিক চিপ নির্মাতা কোনো প্রতিষ্ঠান যাতে হুয়াওয়েকে চিপ সরবরাহ করতে না পারে, সে ব্যবস্থাও নিতে যাচ্ছে তারা। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের রফতানি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে দুর্বল করার হুয়াওয়ের চেষ্টা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন করে নিয়ম পরিবর্তন হুয়াওয়ে ও তাইওয়ানের সেমিকন্ডাক্টর নির্মাতা টিএসএমসির জন্য বড় ধরনের ধাক্কা। টিএসএমসি হুয়াওয়ের জন্য চিপ তৈরি করে থাকে, একই সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক অ্যাপল ও কোয়ালকমের চিপ উৎপাদন করে প্রতিষ্ঠানটি।

বৈশ্বিক প্রযুক্তি খাতে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে হুয়াওয়ে। বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে ক্রমে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠা হুয়াওয়েকে নানাভাবে থামানোর চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। বৈশ্বিক টেলিকম সরঞ্জাম বাজারের বৃহৎ এবং স্মার্টফোন বাজারের দ্বিতীয় বৃহৎ প্রতিষ্ঠানটির স্মার্টফোন ও নেটওয়ার্ক সরঞ্জামে মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেক যন্ত্রাংশ ব্যবহূত হয়। যে কারণে চিপ ও সেমিকন্ডাক্টর সরবরাহ বন্ধের মাধ্যমে হুয়াওয়ের প্রবৃদ্ধি ঠেকাতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র।

গত বছর মে মাসে হুয়াওয়েকে কালো তালিকাভুক্ত করে মার্কিন বাণিজ্য বিভাগ। ওই সময় বলা হয়, হুয়াওয়ে চীন সরকারের হয়ে মার্কিন নাগরিকদের ওপর গোপন নজরদারিতে সম্পৃক্ত। প্রতিষ্ঠানটি মার্কিন স্বার্থ ও নিরাপত্তা পরিপন্থী কার্যক্রমে যুক্ত। যদিও এ অভিযোগের সপক্ষে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ এখন পর্যন্ত উপস্থাপন করতে পারেনি ওয়াশিংটন। হুয়াওয়ে বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

তবে কালো তালিকাভুক্তির পর যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর জন্য হুয়াওয়ের কাছ থেকে যন্ত্রাংশ আমদানির পথ বন্ধ হয়ে যায়। এতে দেশটিতে স্মার্টফোনসহ প্রযুক্তিপণ্যের উৎপাদন ব্যয় বাড়তে শুরু করে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ইউরোপের বাজারেও কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে হুয়াওয়ে। যদিও প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এগিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা তাদের রয়েছে।

বিবৃতিতে গত শনিবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, হুয়াওয়ের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের অযৌক্তিক দমন থামানো উচিত, যা ছিল এর আগের দিন হুয়াওয়ের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নেয়া নতুন সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি হুয়াওয়ের কাছে চিপ ও সেমিকন্ডাক্টর রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা এসেছে। মাইক্রোচিপ, আইসি বা প্রসেসরের মূল উপাদান সেমিকন্ডাক্টর।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, একদিকে বেইজিংয়ের তরফ থেকে পাল্টা ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি, অন্যদিকে মাইক্রোচিপ দুনিয়ায় মার্কিন চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর এর বিরূপ প্রভাব—দুটোই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে।

বিশ্লেষকদের ভাষ্যে, যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক পদক্ষেপের কঠোর জবাব দেবে বেইজিং। একটা বিষয় পরিষ্কার যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ ছাড়া যখন কেউ অন্য একটি দেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠানকে নানা অজুহাতে বছরের পর বছর ব্যবসার দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা চালাবে, তখন তার পাল্টা জবাবের জন্য তৈরি থাকতে হবে। বেইজিং মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্টগুলোকে নিষিদ্ধ করলে যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতির অংকটা বেশ বড় হবে। কারণ পণ্য উৎপাদনের জন্য মার্কিন সিংহভাগ প্রযুক্তি কোম্পানি চীনের ওপর নির্ভরশীল। আইফোন নির্মাতা অ্যাপলের ৯০ শতাংশ পণ্য এখনো চীনে উৎপাদিত হয়।

0 মন্তব্য
0

তুমিও পছন্দ করতে পার

মতামত দিন