হকিংয়ের বলে যাওয়া নানা কথা

কর্তৃক প্রযুক্তি সারাদিন
0 মন্তব্য 290 ভিউজ

তত্ত্বীয় পদার্থবিদ্যার এই দিকপালের করে যাওয়া নানা স্মরণীয় উক্তি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। গার্ডিয়ান, বিবিসি আর এবিসি নিউজ-এর প্রতিবেদন থেকে হকিংয়ের বাছাইকৃত উক্তিগুলোর সংকলন করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।

স্টিভেন হকিংয়ের স্মরণীয় নানা উক্তি-

● ১৯৯৬ সালে প্রকাশিত ‘নেচার অফ স্পেস অ্যান্ড টাইম’-এ ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর নিয়ে তিনি বলেন– “আইনস্টাইন যখন বলেন ‘সৃষ্টিকর্তা পাশা খেলেন না’, তখন তিনি ভুল ছিলেন। কৃষ্ণগহ্বরের কথা বিবেচনা করলে দেখা যায়, সৃষ্টিকর্তা শুধু পাশা খেলেনই না, সেই সঙ্গে তিনি মাঝেমধ্যে পাশা যাতে দেখা না যায় এমনভাবে ছুঁড়ে আমাদের বিভ্রান্ত করেন।”

● ১৯৮৮ সালে প্রকাশ পায় হকিংয়ের লেখা বই ‘এ ব্রিফ হিস্ট্রি অফ টাইম’। পৃথিবী কেন এখনও টকে রয়েছে- এ প্রসঙ্গে এতে তিনি বলেন, “আমরা যদি এ উত্তর খুঁজে পেয়ে যাই, এটি হবে মানুষের চূড়ান্ত বিজয়- এখান থেকে আমরা সৃষ্টিকর্তার মন জানতে পারব।”

● ২০১০ সালে প্রকাশিত ‘দ্য গ্র্যান্ড ডিজাইন’ বইয়ে সৃষ্টিকর্তার বিষয়ে তিনি বলেন, “নীল টাচপেপার জ্বালানো আর মহাবিশ্ব চালানোর জন্য সৃষ্টিকর্তাকে ডাকার দরকার নেই।” সৃষ্টিকর্তার বিষয়ে তার আরও একটি উক্তি হচ্ছে- “আমি বিশ্বাস করি সবচেয়ে সহজ ব্যাখ্যা হচ্ছে, কোনো সৃষ্টিকর্তা নেই। কেউই মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেনি আর কেউ আমাদের ভাগ্য নির্ধারণ করে না। এটি আমাকে একট গভীর উপলব্ধির দিকে নিয়ে যায় আর তা হচ্ছে কোনো স্বর্গ নেই আর মৃত্যু পরবর্তী জীবন বলতেও কিছু নেই। মহাবিশ্বের এই বিশাল নকশার প্রশংসা করতে আমাদের এই একটি জীবনই রয়েছে আর এ জন্য আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ।”

● ২০০৪ সালের ডিসেম্বরে মার্কিন দৈনিক নিউ ইয়র্ক টাইমস-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাণিজ্যিক সাফল্য নিয়ে তিনি বলেন, “আমি চাই আমার বইগুলো বিমানবন্দরের বইয়ের দোকানগুলোতে বিক্রি হোক।”

● ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে ইসরায়েলি টিভি-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে খ্যাতি প্রসঙ্গে বলেন, “সেলেব্রিটি হওয়ার বাজে দিক হচ্ছে আমি বিশ্বের কোথাও এমনভাবে যেতে পারি না যে আমাকে কেউ চিনবে না। গাঢ় কালো চশমা আর পরচুলা পরা আমার জন্য যথেষ্ট নয়। হুলচেয়ারটি আমাকে এ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।”

● ২০১০ সালে ডিসকভারি চ্যানেলে ‘অন ইনটু দ্য ইউনিভার্স উইথ স্টিভেন হকিং’ নামের এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “অসম্পূর্ণতা ছাড়া আপনি বা আমি টিকে থাকতাম না।”

● কষ্ট থেকে কাউকে মুক্তি দিতে ইচ্ছাকৃতভাবে কাউকে মেরে ফেলার বিষয়টিকে বলা হয় ‘ইউথ্যানেশিয়া’। ২০০৬ সালে পিপল’স ডেইলি অনলাইন এ বিষয়ে হকিংয়ের একটি উদ্ধৃতি প্রকাশ করে। তিনি বলেন, “নিজের জীবন শেষ করার অধিকার আক্রান্তের আছে, যদি তিনি চান। কিন্তু আমি মনে করি এটি বড় একটি ভুল হবে। জীবন যতই বাজে লাগুক না কেন, সেখানে সবসময় কিছু একটা থাকে যা আপনি করতে ও তা নিয়ে সফল হতে পারেন। যেখানে জীবন আছে, সেখানে আশাও আছে।”

● ২০০৪ সালে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেল-এ ‘ইন নেকেড সায়েন্স: এলিয়েন কনটাক্ট’ অনুষ্ঠানে মানুষ আর ভিনগ্রহের প্রাণি বা এলিয়েনের মধ্যে সংঘর্ষের শঙ্কা নিয়ে তিনি বলেন, “আমি মনে করি এটি একটি বিপর্যয় হবে। বহির্বিশ্বের অধিবাসীরা হয়তো আমাদের চেয়ে অনেক উন্নত হবে। এই গ্রহে এগিয়ে থাকা জাতগুলোর সঙ্গে আদিম মানুষের সাক্ষাৎ খুব একটি সুখের নয়, আর তারা একই প্রজাতির প্রাণি ছিল। আমি মনে করি আমাদের মাথা নামিয়ে রাখা উচিৎ।” এলিয়েন বিষয়ে তিনি আরও বলেছেন, “যদি এলিয়েনরা আমাদের এখানে আসে, আমি মনে করি এর ফলাফল ক্রিস্টোফার কলোম্বাস-এর প্রথম আমেরিকায় পৌঁছানোর মতো বড় কিছু হবে, যা আমেরিকান আদিবাসীদের জন্য খুব ভালো হয়নি।”

● ২০০৪ সালের ডিসেম্বরে নিউ ইয়র্ক টাইমস-এ এক সাক্ষাৎকারে মোটর নিউরন ডিজিজ নির্ণয় নিয়ে তিনি বলেন, “আমি যখন ২১ বছর বয়সে ছিলাম আমার আশা শূন্যে নেমে এসেছিল। এরপর থেকে সবকিছুই বোনাস।”

● মৃত্যু প্রসঙ্গে ২০১১ সালের মে মাসে গার্ডিয়ান-কে তিনি বলেন, “শেষ ৪৯ বছর ধরে আমি মৃত্যুর শঙ্কা নিয়ে বেঁচে আছি। আমি মৃত্যু নিয়ে ভীত নই, কিন্তু মরে যাওয়ার জন্য আমার তাড়াহুড়াও নেই। প্রথমেই করতে চাই আমার কাছে এমন অনেক কিছু আছে।”

● “আমরা খুবই সাধারণ একটি তারকার ছোট একটি গ্রহে বানরের একটি উন্নত জাত। কিন্তু আমরা মহাবিশ্ব বুঝতে পারি। এটিই আমাদেরকে বিশেষ করেছে।”

● “জীবন যদি মজার না হতো তবে তা বেদনাময় হতো।”

● “জ্ঞানের সবচেয়ে বড় শত্রু অজ্ঞতা নয়, শত্রু হচ্ছে জ্ঞানের বিভ্রম।”

● “লাখ লাখ বছর ধরে মানবাজতি পশুদের মতো জীবনযাপন করেছে। তারপর এমন কিছু হয়েছে যা আমাদের কল্পনার ক্ষমতা ছড়িয়ে দিয়েছে। আমরা কথা বলতে শিখেছি। কথা বলা আমাদেরকে বিভিন্ন ধারণা নিয়ে যোগাযোগের সুযোগ দিয়েছে, অসম্ভব কিছু করতে মানুষকে একত্র হয়ে কাজ করার ক্ষমতা দিয়েছে। মানবজাতির সবচেয়ে বড় অর্জন কথা বলার মাধ্যমে হয়েছে আর সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা এসেছে কথা না বলার মাধ্যমে। এটি এমন হওয়ার কথা না। আমাদের সবচেয়ে বড় আশাগুলো ভবিষ্যতে বাস্তব হয়ে যেতে পারে। প্রযুক্তি ব্যবস্থার মাধ্যমে সম্ভাবনাগুলো অসীম হয়েছে। আমাদের যা দরকার তা হচ্ছে কথা বলতে থাকা নিশ্চিত করা।”

● “আমার লক্ষ্য সাধারণ। এটি হচ্ছে মহাবিশ্ব নিয়ে পুরোপুরি বুঝতে পারা। এটি এখন যেমন তা কেন এমন আর কেন এটি টিকে আছে।”

● “যদিও আমি নড়াচড়া করতে পারি না আর আমাকে একটি কম্পিউটারের মাধ্যমে কথা বলতে হয় কিন্তু মনের দিক থেকে আমি মুক্ত।”

● “আমরা আমাদের লোভ আর নির্বুদ্ধিতার মাধ্যমে আমাদের ধ্বংস করার বিপদে আছি। ছোট আর দূষিত হতে থাকা এবং জনাকীর্ণ একটি গ্রহে আমরা আমাদের ভেতরে তাকিয়ে থাকতে পারি না।”

● নিজের অসুস্থতার বিষয়ে তিনি বলেন, “আমার খাত তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানে আমার অক্ষমতাগুলো উল্লেখযোগ্য কোনো প্রতিবন্ধক হয়নি। বরং আমি হয়তো লেকচার দেওয়া বা প্রশাসনিক কাজে যুক্ত হয়ে যেতাম, এগুলো থেকে আমাকে রক্ষা করে এক অর্থে তা আমাকে সহায়তা করেছে। আমি ব্যবস্থা করে নিয়েছি, যাইহোক, তা শুধু আমার স্ত্রী, সন্তান, সহকর্মী আর ছাত্রদের কাছ থেকে যে বিশাল পরিমাণ সহায়তা পেয়েছি তার কারণেই হয়েছে। আমি দেখি সাধারণভাবে মানুষ সহায়তার জন্য খুব প্রস্তুত, কিন্তু আপনাকে সহায়তায় তাদের চেষ্টা যে স্বীকারযোগ্য তা যাতে তারা অনুভব করতে পারে যেজন্য যতটা পারা যায় তাদেরকে আপনার উৎসাহ দেওয়া উচিৎ।”

● “আমি মনে করি মস্তিষ্ক একটি কম্পিউটার যার উপাদানগুলো যখন ব্যর্থ হবে তখন এটি কাজ করা বন্ধ করে দেবে। ভেঙ্গে পড়া কম্পিউটারের জন্য কোনো স্বর্গ বা মৃত্যু পরবর্তী জীবন নেই; অন্ধকারে ভয় পাওয়া মানুষের জন্য এটি একটি রূপকথা।”

● “তারার দিকে তাকানোর কথা মনে রাখবেন, আপনার পায়ের নিচে নয়। আপনি কী দেখেন তা বুঝতে চেষ্টা করুন আর কীসের কারণে মহাবিশ্ব টিকে আছে তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করুন। কৌতুহলী হোন। আর জীবন যতই বাজে লাগুক না কেন, সেখানে সবসময় কিছু একটা থাকে যা আপনি করতে ও তা নিয়ে সফল হতে পারেন। আপনি কখনও হাল ছাড়েননি এটিই বিষয়।”

● “যেসব মানুষ তাদের আইকিউ বা বুদ্ধিমত্তা নিয়ে অহংকার করেন তারা পরাজিত।”

0 মন্তব্য
0

তুমিও পছন্দ করতে পার

মতামত দিন