যে প্রযুক্তিগুলো বদলে দিয়েছে মানুষের জীবনধারা

কর্তৃক প্রযুক্তি সারাদিন
0 মন্তব্য 354 ভিউজ

আজকের দিনে এসে এমন অনেক উদ্ভাবনই আমাদের কাছে স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে যা আজ থেকে ২০ বছর আগেও ছিল নিছক কল্পবিজ্ঞানের কাহিনি। প্রযুক্তির অগ্রগতি এমন দ্রুতই বদলে দিচ্ছে প্রযুক্তিবিশ্বের প্রেক্ষাপট; প্রতিনিয়তই হাজির হচ্ছে নতুন নতুন উদ্ভাবন। আসছে দিনে প্রযুক্তিবিশ্বে এমন আরও নতুন উদ্ভাবনের অপেক্ষায় রয়েছেন প্রযুক্তিপ্রেমীরা। একটা সময় পর্যন্ত কম্পিউটার মানেই ছিল পেটমোটা সিআরটি মনিটরের সাথে কিবোর্ড, মাউস এবং বিশালাকৃতির সিপিইউ। ক্রমেই সিপিইউয়ের আকার ছোট হতে থাকে, সেইসাথে হাজির হতে থাকে নান্দনিক ডিজাইনের সব মনিটর। ল্যাপটপ এসে সেই চিত্রকে একেবারেই বদলে দেয়। ল্যাপটপও বেশ অনেকটা সময় ধরে বাজারে রাজত্ব ধরে রাখতে সমর্থ হয়। তবে কম্পিউটিং ডিভাইসের এই ধারণায় বৈপ্লবিক ধারণার সূচনা হয় ২০০৭ সালে। আইফোন নামের নতুন এক ধরনের মোবাইল হ্যান্ডসেট হাতের মুঠোয় পুরে দেয় আস্ত একটি কম্পিউটারকে। আকারে খুব ছোট হওয়ায় এর নানা ধরনের সীমাবদ্ধতাও ছিল। সেই সীমাবদ্ধতাকে দূর করে দেয় ২০১০ সালে হাজির হওয়া আরেক অভিনব প্রযুক্তি পণ্য যার নাম আইপ্যাড। এর আদলে তৈরি হওয়া বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ট্যাবলেট পিসি এখন প্রযুক্তি বাজারের অন্যতম জনপ্রিয় এক পণ্য। এমন কয়েকটি প্রযুক্তির কথাই তুলে ধরা হলো এই লেখায়।

ভার্চুয়াল রিয়েলিটি : ভার্চুয়াল রিয়েলিটিকে এখন আর নতুন কোনো প্রযুক্তি বলার সুযোগ নেই। গত কয়েক বছর ধরেই ভার্চুয়াল রিয়েলিটি নিয়ে আলোচনা চলে আসছে প্রযুক্তিবিশ্বে। চলতি বছরে এসে কয়েকটি ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হেডসেটের দেখাও মিলেছে। গুগলের কার্ডবোড, স্যামসাংয়ের গিয়ার ভিআর, এইচটিসির জন্য অকুলাস রিফটের তৈরি স্টিম ভিআর কিংবা সনির প্লেস্টেশন ভিআর প্রভৃতি হেডসেটগুলো ভার্চুয়াল রিয়েলিটির প্রথম প্রজন্মের ডিভাইস। তবে এগুলো এখনও পর্যন্ত মূলত স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট পিসির সাথে সমন্বয় করে চলছে। একটি ডেস্কটপ পিসির সাথে এগুলোকে যতটা বিস্তৃত পরিসরে ব্যবহার করা সম্ভব, তার নমুনা এখনও দেখেনি প্রযুক্তিবিশ্ব। তার জন্য খুব বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না বলেও জানাচ্ছে ভিআর হেডসেট নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ডিভাইসগুলো ব্যবহার করে গেমাররা গেমের ভেতরের নিজেরা বাস্তব চরিত্রের মতো অনুভূতি লাভ করতে পারবেন। গেমের বাইরেও ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে বা বিভিন্ন ক্ষেত্রেই পরিপার্শ্বকে সম্পূর্ণ নতুন করে অনুভব করার সুযোগ তৈরি হবে এসব ডিভাইসে। আসছে বছরগুলোতে তাই ভার্চুয়াল রিয়েলিটি নতুন এক যুগের সূচনা করবে।

অগমেন্টেড রিয়েলিটি : ভার্চুয়াল রিয়েলিটির বেশ কাছাকাছি আরেকটি প্রযুক্তির নাম অগমেন্টেড রিয়েলিটি। গেমিংয়ের মাধ্যমে এরই মধ্যে অগমেন্টেড রিয়েলিটির যাত্রা শুরু হয়েছে। মাইক্রোসফটের কাইনেক্ট অনেকটাই প্রথম প্রজন্মের অগমেন্টেড রিয়েলিটি ডিভাইসের স্বাদ দিয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ অগমেন্টেড রিয়েলিটির সবচেয়ে কাছাকাছি ধারণা দিতে সক্ষম হয়েছে মাইক্রোসফটের তৈরি হলোলেন্স।

মাইক্রোসফটের কিনে নেওয়া মাইনক্র্যাফট গেমের সাথে এটি খুব শীঘ্রই যুক্ত হবে। যেকোনো থ্রিডি মডেলিংয়ের ভেতরকার গঠন পূর্ণাঙ্গভাবে বুঝার সাথে সাথে তা নিয়ে কাজ করার নতুন পদ্ধতি এনে দিতে পারে অগমেন্টেড রিয়েলিটি। বিশেষত শিক্ষা এবং গবেষণা খাতে অগমেন্টেড রিয়েলিটির বহুমাত্রিক সম্ভাবনা রয়েছে। মাইক্রোসফট ছাড়াও ম্যাজিক লিপ নামের একটি স্টার্ট-আপ এবং ভালভ তাদের অগমেন্টেড রিয়েলিটি ডিভাইস তৈরির কথা জানিয়েছে। এর সংযুক্তি তাই ভবিষ্যতের বিশ্বের জন্য বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসার সম্ভাবনা রাখে।

ওয়্যারলেস ফিউচার : শিক্ষা, বিনোদন, গেমিং থেকে শুরু করে সব ধরনের কাজেই গতি আর দক্ষতা এনে দিতে কম্পিউটারের অবদান অনস্বীকার্য। তবে কম্পিউটার মানেই প্রচুর ক্যাবল বা তারের সমাহার। কম্পিউটার ছাড়াও স্মার্টফোন, ট্যাবলেট পিসি বা ল্যাপটপের চার্জিং, ডাটা ট্রান্সফার প্রভৃতি কাজের জন্যও দরকার হয় ক্যাবল। এই ক্যাবল বা তারের প্রয়োজনীয়তাকে বাহুল্য করে তুলতে কাজ করছে শীর্ষ প্রসেসর নির্মাতা ইন্টেল। স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট পিসির জন্য ওয়্যারলেস চার্জিং প্রযুক্তি এরই মধ্যে যাত্রা শুরু করেছে। ইন্টেল এর বাইরে কাজ করছে ল্যাপটপের ওয়্যারলেস চার্জিং নিয়ে। আসছে বছরেই ল্যাপটপের জন্য ওয়্যারলেস চার্জিং সিস্টেম নিয়ে আসার ঘোষণা দিয়ে রেখেছে ইন্টেল। তবে আগামী দিনগুলোর জন্য তাদের বড় চমক হতে পারে ওয়াইগিগ। ডেল এবং এইচপির পিসিগুলোতে ইন্টেলের এই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হতে শুরু করেছে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে তারের সংযোগ ছাড়াই মনিটরসহ পিসির বিভিন্ন পেরিফেরাল যুক্ত করা সম্ভব। তারহীন আগামী গড়ে তুলতে এই প্রযুক্তিকে অগ্রাধিকার দিয়েই গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে ইন্টেল।

পার্সেপচুয়াল কম্পিউটিং : কম্পিউটিং ডিভাইসগুলোর সাথে যোগাযোগের নতুন এক প্রযুক্তির নাম পার্সেপচুয়াল কম্পিউটিং। এখন পিসিকে বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়ার জন্য কিবোর্ড, মাউস বা টাচস্ক্রিনের মতো ইনপুট ডিভাইসের প্রয়োজন হয়। পার্সেপচুয়াল কম্পিউটিং বাস্তবে চলে আসছে আর এসবের প্রয়োজন হবে না। তখন হয়তো হাতের ইশারাতেই পিসিকে প্রদান করা যাবে বিভিন্ন কমান্ড কিংবা চোখের ইশারাতেও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে পিসির কর্মকাণ্ড। এই প্রযুক্তির গবেষণাতেও এগিয়ে রয়েছে ইন্টেল। তাদের থ্রিডি রিয়েলসেন্স ক্যামেরার মাধ্যমে এর কিছু কিছু প্রয়োগের সূচনাও হয়েছে। ভবিষ্যতের বিশ্বে তাই পার্সেপচুয়াল কম্পিউটিংয়ের মাধ্যমে নতুন ধরনের কম্পিউটিংয়ের সম্ভাবনা দেখছেন প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা।

ওয়াল কম্পিউটিং : নির্দিষ্ট কোনো গ-িতে আর কম্পিউটারের ব্যবহার সীমাবদ্ধ না থাকায় কম্পিউটিং ডিভাইসের আকার-আকৃতিতে বৈচিত্র্য আসতে শুরু করেছে। ভবিষ্যতের পৃথিবীতে বিশেষ করে এন্টারপ্রাইজ পর্যায়ের চাহিদা মেটানোর জন্য তাই ওয়াল কম্পিউটিংয়ের ধারণা নিয়ে কাজ করছে মাইক্রোসফট। এই প্রযুক্তিতে দেয়ালজুড়ে থাকবে একটি বিশালাকৃতির ডিসপ্লে ডিভাইস যা একইসাথে যেমন একটি কম্পিউটারের সব কাজ করার সুযোগ করে দেবে, তেমনি একে পূর্ণাঙ্গ একটি ডিজিটাল হোয়াইটবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করার সুযোগও দেবে। ভিডিও কনফারেন্সিং বা প্রেজেন্টেশনের মতো কাজগুলোও এর মাধ্যমে করা যাবে। আসছে বছরের শুরুতেই মাইক্রোসফট বাজারে আনতে যাচ্ছে ওয়াল কম্পিউটিংয়ের প্রথম ডিভাইস সারফেস হাব যার আকৃতি হবে ৮৪ ইঞ্চি। এটি সাফল্য পেলে ওয়াল কম্পিউটিং নিয়েও অন্যান্য প্রযুক্তি কোম্পানি প্রতিযোগিতা শুরু করবে, তা বলাই বাহুল্য। -ইন্টারনেট থেকে

0 মন্তব্য
0

তুমিও পছন্দ করতে পার

মতামত দিন