সময় টা নেহাতই অল্প নয় ৷ ১৫০ বছরেরও বেশি সময় পাড়ি দিয়েছে নকিয়া। ফিনল্যান্ডের একটি ছোট নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল নকিয়া নামের একটি কাগজ মিল । কাগজ থেকে শুরু করে এক সময় রাবারের জুতো তারপর গাড়ির টায়ার। ইলেকট্রনিক বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রাংশ, টিভি এবং এক পর্যায়ে মোবাইল ফোন। নকিয়ার মোবাইল ফোন গুলো বাজারে আসার পর থেকে তা ধীরে ধীরে মন জয় করে নেয় ক্রেতাদের।
বাংলাদেশের প্রত্যেকটি ঘরে ঘরে গিয়ে যদি আপনি জিজ্ঞেস করেন আপনার বাড়িতে কেনা প্রথম ফোনটি কোন ব্র্যান্ডের ছিল?আমি নিশ্চিত ৮০% মানুষ-ই উত্তর দেবে নোকিয়া ১১০০ মডেলের ফোনটি। দেশের মোট জনসংখ্যার সাত ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ ১.৩ মিলিয়ন মানুষকে একসাথে যোগ করতে সক্ষম হয়েছে নোকিয়া। শেষমেষ কিছুদিন আগে বিভিন্ন ধরনের জল্পনা কল্পনা শেষে প্রায় সাড়ে ৫০০কোটি ইউরোর বিনিময়ে সফটওয়্যার চায়না কোম্পানি টি ট্রেনে আসছে নকিয়ার স্মার্টফোন বিভাগ কিভাবে শুরু হয়েছিল নকিয়ার পথ চলা এ আর্টিকেলে আপনারা তাই জানবেন।
সালটা ১৮৬৪। ফ্রেড্রিখ আইডস্ট্যাম নামের একজন ইঞ্জিনিয়ার ফিনল্যান্ডের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত একটি নদীর তীরে গড়ে তুলে কাগজ মিলের প্রতিষ্ঠান। কিছুদিন পরেই সেই নদীর তীরে কারখানাটির পাশেই আরেকটি কারখানা তৈরি করা হয়েছিল। যদিও সেটি ছিল আরেকটা কাগজের মিল । প্রথমদিকে এর নামকরণ করা হয়েছিল নোকিয়া এবি। পরবর্তীতে নোকিয়া রাবারের ব্যবসা শুরু করে। তাদের রাবার খুব প্রসিদ্ধ ছিল। এবং তা দিয়ে জুতো থেকে শুরু করে গাড়ির চাকা সবকিছুই নির্মাণ করা হতো। তাদের পণ্যগুলো ধীরে ধীরে খুব জনপ্রিয়তা অর্জন করতে থাকে । এবং একপর্যায়ে এমনই জনপ্রিয়তা অর্জন করে যে তারা একাধারে বিভিন্ন ধরনের পণ্য উৎপাদন করতে থাকে । একপর্যায়ে ১৯১২ সালে তারা কেবল এর ব্যবসা শুরু করে । এবং তা থেকে ধীরে ধীরে তারা ইলেকট্রনিক্সের ব্যবসায় যুক্ত হয়।
কিছুদিনের ভিতরেই নকিয়া এ বি কম্পানি আরো দুইটি কোম্পানির সাথে যুক্ত হয়ে ইলেকট্রনিক পণ্যের ব্যবসা শুরু করে। এবং সে দুই টি কোম্পানি ছিল উইক স্ট্রোম এর কেবল বিজনেস এবং এডোয়ার্ড ফলনের ফরাবারের বিজনেস।
শুরুতেই তারা একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস আবিষ্কার করে৷ এবং সেটি হচ্ছে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট এর একটি এনালাইজার। এটি সেই সময়কার বেশ সমালোচিত এবং বিখ্যাত আবিষ্কার ছিল।
কিছুদিন পরে গুগলিয়েলমো মার্কনি আবিষ্কার করে বেতার তরঙ্গ যদিওবা একজন বাঙালি বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু এটি বেশ কয়েকদিন আগে আবিষ্কার করেছিল । তবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি না পাওয়ার কারণে এটি সকলের অগোচরে থেকে যায়।যাইহোক বেতার তরঙ্গ আবিষ্কার হওয়ার পর ১৯৬৬ সালে নোকিয়া বেতার যন্ত্র আবিষ্কার করে।
যেটি কেবলমাত্র সামরিক বাহিনীর লোকেরা ব্যবহার করতে পারত যোগাযোগের জন্য । কিছু দিনের ভেতরেই নোকিয়া আরো কিছু ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি আবিষ্কার করে ফেলল। এবং ১৯৮৬ সালের দিকে নোকিয়া পৃথিবীর তৃতীয় ইলেকট্রনিক পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি পেল। এর আগেই ১৯৬৭ সালে ফিনিশ কেবল, ফিনিশ রাবার এবং নোকিয়া এবি একসাথে মিলে গঠিত হয় “নোকিয়া”।
১৯৯২ সালে তৎকালীন ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী নোকিয়ার মোবাইল ফোন ব্যবহার করে সর্বপ্রথম জি এস এম ফোনটি করেছিলেন। প্রায় এক বছরের মাথায় নোকিয়া তাদের ডিজিটাল জিএসএম মোবাইল ফোনটি বাজারে নিয়ে আসে৷ যেটির নামকরণ করা হয়েছিল নোকিয়া ১০১১।
কালের বিবর্তনে এখন বিভিন্ন ধরনের কম্পানি দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছে। তার পাশাপাশি ছেয়ে গেছে বিশ্ববাজারে। ফলের নোকিয়া ফোনগুলো তেমন আর চোখে পড়ে না। আজও বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে স্মৃতি হয়ে আছে নকিয়া ১১০০মডেল ফোনগুলো। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাজার ধরে রেখেছে নকিয়ার স্মার্ট এন্ড্রয়েড ফোনগুলি । তবে নোকিয়ার আশা খুব শীঘ্রই তারা আবার গ্রাহকদের জনপ্রিয়তা এবং ভালোবাসা ফিরে পাবে। আর আমরাও সেই অপেক্ষায় আছি!