ডায়বেটিস শব্দটি জলজ্যান্ত এক আতঙ্কের নাম। উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ক্রমশ বেড়ে যাওয়া সাইলেন্ট কিলার খ্যাত এই রোগটির প্রকোপ এতোই বেড়ে গিয়েছে যে, পুরো বিশ্বের মানুষের স্বাস্থ্য এখন মহা ঝুঁকির মুখে পড়েছে। ডায়বেটিস রোগটি সামান্য ভেবে অবহেলা করার দিন চলে গিয়েছে। বিশ্বের বেশ কিছু দেশ এই ডায়বেটিসের বিরুদ্ধে রীতিমত যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। আর তাতে সবার আগে এগিয়ে এসেছে পূর্ব এশিয়ার দেশ সিঙ্গাপুর। উচ্চমাত্রার চিনিযুক্ত পানীয় নিষিদ্ধ ঘোষণা করার সিদ্ধান্তে পুরো বিশ্বে সিঙ্গাপুরই প্রথম দেশ। ডায়বেটিসের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা মোকাবিলায়, দেশটির সিটি-স্টেট হেলথ মিনিস্ট্রি থেকে গেলো বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) এই ঘোষণা দেওয়া হয়।
মাঝারি থেকে উচ্চমাত্রার চিনিযুক্ত পানীয়তে এখন থেকে লেবেল গ্রেডিং যুক্ত করা হবে। পরিমাণ নির্ণয়ের এই পদ্ধতিটি চিনিযুক্ত পানীয় নিষিদ্ধ বা তার উপরে ট্যাক্স বসানোর প্রাথমিক প্রক্রিয়া মাত্র। দেশটির শতকরা ১৩.৭ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্করা ডায়বেটিসে আক্রান্ত। আন্তর্জাতিক ডায়বেটিস ফেডারেশনের ২০১৫ সালের তথ্য মতে যা উন্নত দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্থান দখল করে আছে। ধারণা করা হচ্ছে যে সিঙ্গাপুরে প্রায় ৩৬০,০০০ জন মানুষ টাইপ-২ ডায়বেটিসে আক্রান্ত। যা এশিয়ায় পার-ক্যাপিটাল চিনি গ্রহণের মাত্রার মধ্যে সর্বোচ্চ। ডায়বেটিস প্রধানত দুই ধরনের হয়ে থাকে। টাইপ-১ ডায়বেটিস- যা জিনগত ও জন্মগত এবং যা কখনোই ভালো হবার নয়। এরপরে আসে টাইপ-২ ডায়বেটিস- যা জীবনযাত্রার অনিয়ম, খাদ্যাভ্যাসের সমস্যা, শরীরচর্চার অভাব এবং দুশ্চিন্তা থেকে দেখা দেয় এবং সঠিক ও নিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রার মাধ্যমে সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
চিনি গ্রহণের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে নামার সাথে দেশটির সরকার একটি প্রমোশনাল ভিডিও তৈরি করেছেন। যে ভিডিওতে দেখা যায় গার্ডিয়ান অব হেলথ চিনিনিরোধক তীর ব্যবহার করে চিনিকে নিশ্চিহ্ন করে দিচ্ছে। এদিকে ২০১৬ সালে দেশটির স্বাস্থ্য সংস্থা সাদা চালকে ডায়বেটিস তৈরিকারী প্রধান উপাদান হিসেবে শনাক্ত করেছে। এই খাদ্য উপাদানটিকে যেকোন চিনিযুক্ত পানীয়ের চাইতেও অনেক বেশি ক্ষতিকর বলে জানাচ্ছে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা। তারা জানাচ্ছেন, দৈনিক প্রতিবেলায় এক প্লেট পরিমাণ সাদা চালের ভাত গ্রহণে টাইপ-২ ডায়বেটিস দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় প্রায় ১১ শতাংশ পর্যন্ত।
এদিকে চিনিযুক্ত খাবার ও পানীয়ের দরুন স্বাস্থ্য সমস্যা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে। ফলে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড, মেক্সিকোসহ বিশ্বের প্রায় ২৮টি দেশ চিনিযুক্ত পানীয়ের উপর ট্যাক্স বসানোর ঘোষণা দিয়েছে।