যে গ্যালাক্সি বা ছায়াপথে পৃথিবীর অবস্থান, সেই গ্যালাক্সির দিকে ধেয়ে আসছে বিশালাকার আরেক গ্যালাক্সি অ্যান্ড্রোমিডা। আর এই কারণেই মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি তার সবকিছু নিয়ে এগিয়ে চলেছে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে। অ্যান্ড্রোমিডা মিল্কিওয়ে বা আকাশগঙ্গার সবচেয়ে কাছের গ্যালাক্সি। আকারেও মিল্কিওয়ে থেকে অনেক অনেক বড়। মহাকাশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, অ্যান্ড্রোমিডার ইতিহাস খুবই সহিংস। অতীতে সে ছোট ছোট গ্যালাক্সি আকর্ষণ করে নিজের ভেতর নিয়ে নিয়েছে। সহজ করে বলেলে, সেটি খেয়ে ফেলেছে। ধ্বংস হয়ে যাওয়া সেসব ছোট গ্যালাক্সির বেঁচে যাওয়া তারাগুলো গুচ্ছ বা সারি বেঁধে শক্তিশালী অ্যান্ড্রোমিডার অংশ হিসেবে রয়ে গেছে। সেগুলো পরীক্ষা করে এ সিদ্ধান্তে এসেছেন বিজ্ঞানীরা।
পরীক্ষায় দেখা গেছে, গত প্রায় ১০ বিলিয়ন বছরে অ্যান্ড্রোমিডা বেশ কয়েকটি তুলনামূলক ছোট আকারের ছায়াপথগুলোকে নিজের শক্তিশালী মাধ্যাকর্ষণ বলের মাধ্যমে নিজের দিকে আকর্ষণ করে নিয়ে ছিন্নভিন্ন করে ফেলেছে। যখন অ্যান্ড্রোমিডা মাত্র নিজে গঠিত হওয়া শুরু করেছিল, তখন থেকেই ‘গ্যালাক্সি খাওয়া’র অভ্যাস তার। এবং সেসব ছোট হারিয়ে যাওয়া ছায়াপথের অস্তিত্বের ক্ষীণ পদচিহ্ন এখনো রয়ে গেছে। এবার আমাদের পালা। একই পরিণতি মিল্কিওয়েকেও বরণ করতে হবে বলে বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন। আর তার সঙ্গে ধ্বংস হতে হবে আমাদের পৃথিবীকেও। তবে এজন্য মিল্কিওয়ের হাতে আরও প্রায় ৪ বিলিয়ন বছর রয়েছে বলে জানিয়েছেন মহাকাশ গবেষকরা। তারা এখন নতুন উদ্যমে গবেষণা করছেন অ্যান্ড্রোমিডাকে নিয়ে।
অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ‘রিসার্চ স্কুল অব অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স’র গবেষক ড. ম্যাকি বলেন, আগামী ৪ বিলিয়ন বছরের মধ্যে মিল্কিওয়ে এবং অ্যান্ড্রোমিডার সংঘর্ষ হতে যাচ্ছে। সুতরাং আমাদের গ্যালাক্সি কোন ধরনের রাক্ষসের বিরুদ্ধে লড়তে যাচ্ছে সেটা জানতে পারলে মিল্কিওয়ের চূড়ান্ত পরিণতি সম্পর্কে ধারণা পেতে আমাদের সহজ হবে। বিজ্ঞানীদের আশা, এ গবেষণার মধ্য দিয়ে জানা সম্ভব হবে কী উপায়ে আমাদের ছায়াপথকে গিলে খাবে অ্যান্ড্রোমিডা এবং তারপর কীভাবে ধীরে ধীরে তা ধ্বংস হবে। এছাড়াও হয়তো জানা সম্ভব হবে কেন এবং কীভাবে বিশাল অ্যান্ড্রোমিডা তার আশপাশের গ্যালাক্সিগুলোকে শেষ করে দিচ্ছে।