কিডনি রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা পদ্ধতি

কর্তৃক নাহিদ পারভীন
0 মন্তব্য 896 ভিউজ

মানবদেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ কিডনি। মানবজাতি পৃথিবীতে যেসব প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে তার মধ্যে কিডনি রোগ অন্যতম। এই কিডনি রোগ খুব নীরবে শরীরের ক্ষতি করে। খুব জটিল অবস্থা না হওয়া পর্যন্ত সাধারণত লক্ষণগুলো ভালোভাবে প্রকাশ পায় না। কিডনি রোগ হলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। পৃথিবীতে কিডনি রোগের চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল। তাই সময় থাকতেই কিডনির যত্ন নিতে হবে। যত্ন না নিলে কিডনির আয়ু কমে যায় বা কিডনি রোগ হয়। কিডনি ৭০ থেকে ৮০ ভাগ বিকল হওয়ার আগে কোনভাবেই লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় না।

বাংলাদেশে একটি বেসরকারি সংস্থার জরিপে বলা হয়েছে, প্রায় দুই কোটি মানুষ কিডনি রোগে ভুগছে। যাদের বেশিরভাগই পর্যাপ্ত চিকিৎসা পাচ্ছেন না। কিডনি হার্ট, ফুসফুস, মস্তিষ্ক, লিভার প্রভৃতি অঙ্গের কাজের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। কিডনির সব চেয়ে ক্ষুদ্র অংশ হল নেফ্রোন। প্রতিটি কিডনিতে প্রায় ১০ লাখ নেফ্রোন থাকে যার প্রতিটিই রক্ত পরিশোধনের ক্ষুদ্র ছাঁকুনি হিসেবে কাজ করে। অনেক কারণে কিডনি রোগ হতে পারে।আর অনেকে বুঝতে পারেন না এই রোগের লক্ষণগুলো। এ অবস্থায় দেখা যায় খাওয়ায় অরুচী, বমি বমি ভাব, মাঝে মাঝে ঘুম থেকে উঠলে চোখ-মুখ ফোলা দেখানো অর্থাৎ চোখের নিচের অংশ বেশি ভারি ভারি হয়ে থাকে। এছাড়া আস্তে আস্তে রক্ত শূণ্যতা দেখা দেয়। চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে আসে। আরও যদি বেশি ঝুঁকিতে থাকে তবে বিনা কারণে শরীর চুলকাবে, গায়ের রঙ পরিবর্তন হয়ে যাবে। রাতে অনেকবার প্রস্রাব করতে হয়। কারও কারও উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিতে পারে।

যেসব লক্ষণে বুঝবেন কিডনিতে সমস্যা হয়েছে-

১। অতিদ্রুত হাঁপিয়ে যাওয়া।

২। কোনো কাজে মনোনিবেশ করতে না পারা।

৩। অরুচি ও ঘুমের সমস্যা।

৪। রাতে বেশি বেশি প্রস্রাব ও মাংসপেশিতে টান লাগা।

৫। মুখ ও অস্থির সংযোগ স্থল ফুলে যাওয়া।

৬। অনিয়ন্ত্রিত উচ্চরক্তচাপ।

৭। শরীরে পানি আসা প্রভৃতি।

৮। প্রস্রাবের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলোনায় কমে যাওয়া বা প্রস্রাব লাল বা রক্ত যাওয়া।

৯। কোমড়ের দুই পাশে ব্যথা হওয়া। এই ব্যথা তলপেটেও হতে পারে।

কিডনি রোগের চিকিৎসা পদ্ধতিঃ 

কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট : অকেজো কিডনি পরিবর্তন করে কোনো দাতার কিডনি সংযোজনকে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট বলে। কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট ব্যয় বহুল এবং এটি করার পর বাকি জীবন নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ খেয়ে যেতে হয়।

অ্যান্টিবায়োটিক : ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে ভালো ফল পাওয়া যায়। তবে ব্যাকটেরিয়ার ধরন নির্ণয়ে রক্ত/প্রস্রাব কালচার করার প্রয়োজন হয়।

নেফ্রেকটোমি : শল্য চিকিৎসার মাধ্যমে কিডনি অপসারণকে নেফ্রেকটোমি বলে। কিডনিতে ক্যান্সার/টিউমার হলে বা কোনো কিডনি পুরোপুরি বিকল হয়ে সমস্যার সৃষ্টি করলে নেফ্রেকটোমি করা হয়ে থাকে।

নেফ্রোস্টোমি : এ বিশেষ পদ্ধতিতে চামড়ার নিচ দিয়ে একটি ক্যাথেটার কিডনিতে পৌঁছানো হয় যার মাধ্যমে বিকল্প পথে প্রস্রাব বের হয়ে আসতে পারে।

লিথোট্রিপসি : উচ্চপ্রযুক্তির আল্ট্রাসনিক শক ব্যবহার করে কিডনির পাথরকে ছোট করে বিশেষ ব্যবস্থায় বের করে আনার চিকিৎসা পদ্ধতিকে লিথোট্রিপসি বলে।

ডায়ালাইসিস : কৃত্রিম যন্ত্রের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময় পরপর রক্ত পরিশোধন ব্যবস্থার নাম ডায়ালাইসিস। ডায়ালাইসিস বিভিন্ন রকমের হতে পারে যেমন- হেমোডায়ালাইসিস, পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস প্রভৃতি। এটি বেশ ব্যয় বহুল চিকিৎসা পদ্ধতি।

0 মন্তব্য
0

তুমিও পছন্দ করতে পার

মতামত দিন